বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে নয়নাভিরাম অপরূপ সৌন্দর্য্য নিয়ে জেগে আছে 'শুভ সন্ধ্যা' সমুদ্র সৈকত। যার একদিকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। অপরদিকে সীমাহীন বঙ্গোপসাগর। স্থানীয়দের কাছে এটি নলবুনিয়া চর নামেই বেশি পরিচিত। কিন্তু সুরক্ষায় উদ্যোগ না থাকায় সাম্প্রতিক সময়ে এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন এলাকাটি ধ্বংস হতে চলেছে।উপকূলীয় জেলা বরগুনার তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের নলবুনিয়ার চরে অবস্থিত এই 'শুভ সন্ধ্যা' সমুদ্র সৈকত। এখানে উপমহাদেশের সব চেয়ে বড় জোছনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। উৎসব ঘিরে লাখো মানুষের সমাগম ঘটে। তা ছাড়া প্রতিদিন শতশত পর্যটক আসতো। সমুদ্রের মূল আকর্ষণ ছিল ঝাউবন। কিন্তু অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, দুর্যোগ, জলোচ্ছ্বাসসহ নানা কারণে উজাড় হচ্ছে ঝাউবন।স্থানীয়রা জানান, সৈকতের পাশেই বেসরকারিভাবে ৩৬০ মেগাওয়াটের তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। আর এই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সৈকতের তীর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় সৈকত ও ঝাউগাছ ভেঙে সমুদ্রে বিলীন হয়ে গেছে। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাগর পাড়ের উদ্ভিদ ও সাগরের জীব বৈচিত্র্য। সৈকতের সৌন্দর্য বর্ধনকারী ঝাউবন সংরক্ষণের দায়িত্ব না নিলে উপকূলীয় এলাকা ও সৈকত বিপন্ন হতে পারে।বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-১৫ সালে সৈকতে ১০ হেক্টর ও ২০২০-২১ সালে ০৭ হেক্টর জমিতে তারা ঝাউ গাছের চারা রোপন করেছেন। এতে সৈকতে সবুজ বেষ্টনী তৈরী হয়। সবুজের সমারোহে সৈকতে এক মনোরম দৃশ্য ফুটে ওঠে। কিন্তু ২০১৮-১৯ সাল থেকে সমুদ্রের ঢেউয়ের ঝাপটায় শুরু হয় বালুক্ষয়। আর এ অব্যাহত বালুক্ষয়ে ভাঙতে শুরু করে ঝাউবন।সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, যে ঝাউ গাছ গুলোকে কেন্দ্র করে এই সৈকত গড়ে উঠেছে সেই গাছগুলোই অস্তিত্ব বিলীনের পথে। সমুদ্রের অস্বাভাবিক ঢেউয়ের কারণে অধিকাংশ ঝাউগাছের শিকর থেকে মাটি সরে গিয়ে হেলে পড়ছে। এতে সৈকত প্রকৃতিক সৌন্দর্য হারাচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন ঠেকাতে না পরলে আগামী এক বছরের মধ্যে সৈকতের পুরো ঝাউবন সমুদ্রে বিলীনের আশঙ্কায় রয়েছেন।ঝাউবন ও সৈকত এলাকার বাসিন্দা শামীম ওসমান বলেন, এখান প্রায় ২ কিলোমিটার ঝাউবন ছিল পর্যটকরা হেঁটে সৈকতের ঢেউ উপভোগ করতে যেত। এখানে বিশাল ঝাউবন ছিল। কিন্তু এখন ভাঙতে ভাঙতে সমুদ্র বলতে গেলে একেবারে বেড়িবাঁধের কাছে চলে এসেছে।তালতলী উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) উম্মে সালমা বলেন, ভাঙন প্রতিরোধের জন্য উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে সি আইপি-২ প্রকল্প প্রস্তাবনা দেওয়া আছে, এটি বাস্তবায়িত হলে ভাঙন ঠেকানো যাবে। আশা করছি দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।