জীবাশ্ম জ্বালানি ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর নিশ্চিত করার দাবিতে আজ খুলনায় ধ্রুব , ক্লিন এবং বিডব্লিউজিইডি যৌথভাবে একটি প্রচারাভিযানের আয়োজন করে

জীবাশ্ম জ্বালানি ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর নিশ্চিত করার দাবিতে আজ খুলনায় ধ্রুব , ক্লিন এবং বিডব্লিউজিইডি যৌথভাবে একটি প্রচারাভিযানের আয়োজন করে। কর্মসূচিটি বাঁশখালী আন্দোলনে আহত ও নিহতদের ন্যায্য দাবীর স্মরণে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে স্থানীয় জনগণ ক্ষতিকর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। এই কর্মসূচির মাধ্যমে পরিবেশবাদী, মানবাধিকারকর্মী এবং সাধারণ নাগরিকরা একত্রিত হয়ে জানিয়ে দেন— “জীবনের বিনিময়ে উন্নয়ন নয়, চাই টেকসই ও ন্যায়ভিত্তিক জ্বালানি ভবিষ্যৎ।”

এই মানববন্ধনে পরিবেশবিদ, শিক্ষার্থী, নাগরিক সমাজের সদস্য এবং সাধারণ জনগণ অংশ নেন। তাঁরা সকলেই "জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ করুন, নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ করুন" স্লোগান তুলে ধরেন। বক্তারা পরিষ্কার জ্বালানির রূপান্তরের জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
২০১৬ সালে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করতে গিয়ে কৃষিজমি ও কবরস্থান রক্ষার দাবিতে যেসব মানুষ জীবন দিয়েছেন, তাঁদের আত্মত্যাগের স্মরণে আজকের কর্মসূচি ছিল এক প্রতিজ্ঞা— “ উন্নয়নের নামে আর যেন সাধারণ জনগণের প্রাণ না ঝরে।”
বক্তারা উল্লেখ করেন যে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ কেবল পরিবেশগতভাবেই ধ্বংসাত্মক নয়, এটি অর্থনৈতিকভাবেও টেকসই নয়। তারা বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, এবং কয়লা, এলএনজি ও অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধের দাবীতে যারা প্রাণ দিয়েছিলেন তাদের দাবী পূরণের জন্য বর্তমান সরকারের কাছে আহ্ববান জানানো হয়।
ধ্রুব সংস্থার প্রতিনিধি ত্রিবিনা রায় বলেন, “বাংলাদেশকে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। বাঁশখালী আন্দোলন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ক্ষতিকর প্রভাব উন্মোচন করেছিল। আমরা সেই ভুল পুনরাবৃত্তি করতে পারি না।” তিনি সরকার ও বিনিয়োগকারীদের দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত নিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান।
ধ্রুব সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রেখা মারিয়া বৈরাগী আরও বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা জ্বালানির মূল্য অস্থির করে তোলে, সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করে এবং পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটায়। তারা জোর দিয়ে বলেন, সৌর ও বায়ু শক্তি টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি ব্যয়বহুল আমদানি নির্ভরতা কমাতে পারে। তারা আর জানান, বাঁশখালীর মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর হতে দেওয়া যাবে না।
এই প্রচারাভিযানে আয়োজকরা নানান ব্যানার ,প্লাকার্ডে তাদের দাবীগুলো লিখে দায়িত্বশীল ব্যাক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং ন্যায়সঙ্গত জ্বালানি রূপান্তরের পক্ষে সচেতনতা বৃদ্ধির এবং জীবাশ্ম জ্বালানি সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। খুলনার এই উদ্যোগ সারা দেশে জীবাশ্ম জ্বালানির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ এবং বক্তৃতা করেন রোজি মন্ডল, মিনতি বালা, রেবেকা গোয়াল, মিরা ঘোরামী, নাহার বেগম, জাচিন্তা মন্ডল , নাঈম শেখ সহ প্রমূখ।