সাম্প্রতিক সময়ে উত্তরার হাবিব হাসানের ক্যাডার, কাউলার যুবলীগের আনোয়ার হোসেন আনুর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ঘরবাড়ি দখল, নির্যাতন ও নানা ধরনের অন্যায় কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব কর্মকাণ্ড আনোয়ার হোসেন আনুর ছত্রছায়ায় পরিচালিত হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একসময় এই চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব হাবিব হাসানের অধীনে আনোয়ার হোসেন আনু পরিচালনা করত। বর্তমানে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত দেলোয়ার হোসেন, যিনি একসময় যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ২৪শে নভেম্বর চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার অনুপস্থিতিতে তার শিষ্য আনোয়ার হোসেন আনু এই চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। ছাত্র আন্দোলনের ওপর দখলদার বাহিনীর হামলা: গত ৪ আগস্ট ২০২৪ তারিখ উত্তরা রাজউক কমপ্লেক্স এবং বিএনএস সেন্টারের সামনে সড়কে (ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ে) আন্দোলনরত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর এলোপাথাড়ি গুলি চালায় আনোয়ার হোসেন আনুসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাদের গুলিতে শতাধিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আহত হয়।
৪ আগস্ট দুপুরে উত্তরা পূর্ব থানার সামনে হাইওয়ের প্রধান সড়কে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দেন মো. রায়হান, যিনি টঙ্গী কলেজের ছাত্র এবং উত্তরা সেক্টর-৭, রোড-৮-এর একটি ছাত্রাবাসে থাকেন। তার বাড়ি বরিশালে। আন্দোলনের সময় আনোয়ার হোসেন আনুসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা গুলি চালালে তার পায়ে গুলি লাগে। এদিন বিকেল চারটার দিকে রাজলক্ষ্মী মার্কেটের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলছিল। তখন হাবিব হাসানের নেতৃত্বে আনোয়ার হোসেন আনু তার দলবল নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে লাঠি, রড, ধারালো ছুরি, রামদা ও পেট্রলবোমা নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। জাহাঙ্গীর গ্রুপের লোকজন আন্দোলনকারীদের ওপর পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে। এতে সাধারণ ছাত্র ও জনতা আহত হন। এরপর অন্য নেতাকর্মীরা লাঠি ও রড দিয়ে সাধারণ ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালিয়ে তাদের গুরুতর আহত করে। প্রকৌশলীর বাড়ি দখলের চেষ্টা: উত্তরার কাউলায় কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ার বাড়ি করেছেন, কিন্তু তারা কোনোভাবেই সেখানে থাকতে পারছেন না। আনোয়ার হোসেন আনুর অত্যাচারে তাদের প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা সেখান থেকে চলে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার কিছু সাধারণ মানুষ জানিয়েছেন, তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব কার্যক্রম আনোয়ারের বাহিনীর দখলে। আনোয়ার বাহিনী বিভিন্নভাবে তাদের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে।
অভিযানেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে দখলদার চক্র যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর অধীনে এখন পর্যন্ত এই আনোয়ার হোসেন আনুর বাহিনীর কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ—এসব সংগঠন এখন জার্মানির নাৎসি বাহিনীর চেয়েও ভয়ংকর সন্ত্রাসী সংগঠনে পরিণত হয়েছে। ৫ আগস্টের পর তারা উত্তরার বিভিন্ন সেক্টরের বাড়িঘরে হামলা ও ডাকাতির চেষ্টা করে। সেই কয়েকদিন পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণে এলাকার সচেতন নাগরিক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা রাতভর পাহারা দিতে বাধ্য হয়।
অস্ত্রবাজি ও উত্তরা অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ: বর্তমানে আনোয়ার হোসেন আনু অস্ত্র নিয়ে দখলদারিত্বের রাজত্ব কায়েম করেছে। আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোর কাছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে, যা তারা দেশব্যাপী সহিংসতা সৃষ্টিতে ব্যবহার করছে। প্রতি রাতে উত্তরার বিভিন্ন হোটেল ও রেস্তোরাঁয় আনোয়ার হোসেন আনুর বাহিনী এবং ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের পলাতক আসামিরা জড়ো হয় এবং পুলিশের ছত্রছায়ায় সারা রাত মদ্যপান ও অনৈতিক কার্যকলাপ চালায়। উত্তরা একসময় আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রধান ঘাঁটি ছিল, যা লিড করত হাবিব হাসান। এখন পর্যন্ত তার কোনো লোককে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ধরা হয়নি।
আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা এখন বিএনপির ছত্রছায়ায় আওয়ামী লীগের এসব ক্যাডার বর্তমানে বিএনপির ব্যানারে বিভিন্ন জায়গায় দখল বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। দেলোয়ার হোসেন (কাউলার নামাপাড়া), যিনি একসময় যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন, ২৪শে নভেম্বর চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার হন। বর্তমানে তার সহযোগী আনোয়ার হোসেন আনু তার শিষ্য হিসেবে চাঁদাবাজির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন রয়ে যায় সময় পাল্টাচ্ছে, যুগ পাল্টাচ্ছে, দল পাল্টাচ্ছে, কিন্তু পাল্টাচ্ছে না সন্ত্রাসীদের দখল বাণিজ্য। পাল্টাচ্ছে না তাদের নৈতিক চরিত্র। শুধু নাম পরিবর্তন করে এক ব্যানার থেকে আরেক ব্যানারে চলে যাচ্ছে। এই আওয়ামী সন্ত্রাসীরা এখন বিএনপিতে যোগ দিয়ে চাঁদাবাজির বাণিজ্য সুবিধা আরও বাড়িয়ে তুলছে।