নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে বকেয়া বেতনের দাবিতে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। রবিবার (১৩ ই আগষ্ট) বিকাল ৩.৩০ টা থেকে ইপিজেডের বেপজা অফিসের সামনে টেক্সাস গার্মেন্টসের শ্রমিকেরা বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করেন। তাদের তিন মাসের বকেয়া বেতন বুঝিয়া দেওয়ার দাবি জানায়। বেপজা কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের অফিসের সামনে থেকে বের করে দিয়ে গেট লাগিয়ে দেন। শ্রমিকেরা বিকেল ৪.৩০টা পর্যন্ত বেপজা কর্তৃপক্ষ থেকে কোন প্রকার আশ্বাস না পেয়ে রাস্তায় বসে প্রতিবাদ জানায় ।
এদিকে বেপজা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সহযোগিতা না করে টেক্সাস গার্মেন্টসের মালিকের পক্ষ নিয়ে উত্তরা ইপিজেডের নিরাপত্তা প্রহরীরা বকেয়া বেতন চাইতে যাওয়া শমিকদের এলোপাতারী মারধর শুরু করেন । উত্তরা ইপিজেডের (বেপজা) নিরাপত্তা প্রহরীদের মারধরে কয়েকজন নারী শ্রমিক গুরুতর আহত হয়। গুরুতর আহত নারী শমিকদেরকে উদ্ধার করে নীলফামারী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তরা ইপিজেডের জিন্স প্যান্ট ও শার্ট তৈরীর টেক্সাস গার্মেন্টসে প্রায় ১৬০ জন শ্রমিক ও অফিস ষ্টাফ কর্মরত ছিলেন। তাদের তিন মাসের বেতন বকেয়া আছে।
এদিকে কারখানাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক টাঙ্গাইলের ফরহাদ হোসেন ফারুক শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন পরিশোধ না করে অন্যজনকে কোম্পানি লিজ দিয়ে ঢাকা চলে গেছেন। আমাদের বেতন না দিয়ে কোম্পানির মালিক তার কারখানা গোপনে অন্যজনের কাছে লিজ দিয়ে সঠকে পড়েন। শ্রমিকরা বকেয়া বেতন না পাওয়ার আশঙ্কায় বিকাল থেকে আন্দোলনে শুরু করেন। নাম প্রকাশ না করার সর্ত্বে শ্রমিকরা অভিযোগ করে জানান, তিনমাস ধরে আমরা বেতন পাই নাই।
বেতন চাইতে গিয়ে আমাদের হুমকী দিয়ে মারধর করা হয়। আমাদের কয়েকজন নারী সহকর্মী বেপজা নিরাপত্তা প্রহরীদের মারধরে গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদেরকে নীলফামারী সদর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়াও অনেকে আহত হয়েছে,আমরা বেতন চাই। আমাদের কেনো এভাবে মারধর করা হলো তার জবাব চাই । শ্রমিকরা আরও বলেন, বেপজা কর্তৃপক্ষের এমন নির্মম নিষ্ঠুরতায় আমরা মর্মাহত । শ্রমিকরা বেপজা কর্তৃপক্ষের এমন আচরনের বিচার দাবী করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বেপজা কর্তৃপক্ষের এমন নির্মম নিষ্ঠুরতা কোথাও দেখি নাই। এমন ঘটনার ভিডিও করতে গিয়ে অনেকের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়েছেন বেপজার নিরাত্তা প্রহরীরা এবং ভিডিও করার সময়ের ৯টি মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে রাস্তায় আচার দিয়ে ভেংগে ফেলেছেন বেপজা কর্তৃপক্ষ।
নাম জানাতে অনিচ্ছুক ব্যাক্তি বলেন, আমার সহ কয়েক জনের মোবাইল ফোন নিয়ে গিয়ে রেখে দিয়েছেন রাত ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষায় রেখেও ফেরত দেয় নাই। আরও বলেন, আমাদেরকে আটকে রেখে অনেক মারধরও নির্যাতন করা হয়েছে-অভিযোগ করেন। তারা আরও বলেন, এদের বিচার হওয়া উচিত।উত্তরা ইডিজেড এলাকার বেশ কয়েকজন অভিযোগ করে জানান, টেক্সাস গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরহাদ হোসেন ফারুক তার কোম্পানীতে শেয়ার হিসাবে আমাদের কাছে বেশ কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আমরাও আমাদের শেয়ারের অংশ পাচ্ছিনা। তাকে মোবাইলে কল দিলে বিভিন্ন ধরনের আশ্বাস দেন তিনি। তারা তাদের শেয়ার এর টাকা ফিরে পাওয়ার দাবী জানান ।
এমতাবস্থায়, টেক্সাস গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরহাদ হোসেন ফারুকের সাথে মুঠোফোনে কথা বলা হলে তিনি বলেন, বকেয়া বেতনের দেওয়া নিয়ে এ সমস্যা হয়েছে। আমি দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। উল্লেখ্য, উত্তরা ইপিজেডের একটি সুত্র জানায়, সন্ধ্যার পর টেক্সাস গার্মেন্টসের শ্রমিক ও অফিস স্ট্যাফদের বকেয়া বেতন পরিশোধের বিয়ে টেক্সাস গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরহাদ হোসেন ফারুকের সাথে আলোচনা হয়েছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরহাদ হোসেন ফারুক শ্রমিকদের বেতন দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। নীলফামারী সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) খান মোহাম্মদ শাহরিয়ারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়েছে। এঘটনায় শ্রমিকদের লিখিত অভিযোগ পাইলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
