বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় দূর্যোগের সাথে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশের জন্য নতুন এক আতঙ্কের নাম মোখা। বঙ্গপোসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ থেকে পর্যায়ক্রমে গভীর নিম্নচাপ, ঘূর্নিঝড়, প্রবল ঘূর্নিঝড় থেকে আতি প্রবল ঘূর্নিঝড়ের রূপ নিয়েছে মোখা। তার ওপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে মোখার আকৃতি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন অনেকটা সিডরের মত চোখাকৃতি ধারন করেছে মোখা যা জনমনে তাজা করছে ২০০৭ এর ভয়াবহ সেই স্মৃতি। তাই হয়তো সরকারের প্রস্তুতি আর তোড়জোড় চোঁখে পড়ার মত। ঘূর্নিঝড়ের সম্ভাব্য ২৪ ঘন্টা আগ থেকেই তৎপর সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর। উপকূলে আরো একদিন আগে থেকেই ছূটি বাতিল হয়েছে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রনালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের । উপকূলে বসবাস করা প্রায় ৫ লাখ মানুষের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র। সেইন্ট মার্টিনের মানুষদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ে।
মাছ ধরার নৌকা আরো ২ দিন আগে থেকেই উপকূলে ফিরে আসার জন্য বলা হয়েছিলো। গত দুইদিন অনেক নৌকা গভীর সমুদ্রে থাকলেও গতকাল থেকেই ফিরে আসছে বেশিরভাগ নৌকা। দুই এক জায়গায় নৌকা নিখোঁজের দাবি উঠলেও ফিরে আসা জেলেরা জানাচ্ছেন ঠিকভাবেই ফিরছেন সবাই। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তৎতপরতা ছিলো গতসপ্তাহ থেকেই। সাগরে জন্ম নেয়া মোখার প্রতিটি চালচলন পর্যবেক্ষন করে পূর্বাভাস জানিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি।আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিনে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং চট্রগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পায়রা বন্দরকে দেখাতে বলেছে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত। কক্সবাজার জেলা রয়েছে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায়। উপকূলীয় অন্য ৬ জেলা , চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও ভোলা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহকে রাখা হয়েছে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায়।
আরো আগেই ৮০ শতাংশের বেশী পাকা ফসল দ্রুত ঘরে তোলার পরামর্শ দিয়েছিলো কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। শুক্রবার ভোর থেকে বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষনা করেছে শাহ-আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও কক্সবাজার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল বন্ধ ঘোষনা করেছে বিআইডাব্লিউটিএ। বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি এক জরুরি সভা শেষে জানিয়েছে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও কারিগরি বোর্ডের রোববারের এস.এস.সি পরীক্ষার স্থগিতাদেশ।চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা বা ‘অ্যালার্ট-ফোর’ জারি করে জেটিতে থাকা জাহাজগুলোকে বহির্নোঙ্গরে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে মহেশখালীর নিকটবর্তী সাগরে ভাসমান দু’টি এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ সাময়িক বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় রাজধানীতে তাই সকাল থেকেই বেড়েছে লোডশেডিং ।
গণমাধ্যমও সব মূহুর্তে মানুষকে তথ্য প্রদান করে সচেতনতা বৃদ্ধিতে বেশ ভালো ভূমিকা রাখছে। বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা যাচ্ছে সবকিছু গুরুত্বের সাথে পর্যবেক্ষন ও তত্বায়বধন করছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সার্বিকভাবে বলা যায় বেশ ভালো প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে ১৮০-২০০ কি.মি. গতিবেগের বাতাস নিয়ে ধেয়ে আসা ঘূর্নিঝড়, ৮-১২ ফিট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসকে বাংলাদেশের জন্য একটি চ্যলেঞ্জ হিসেবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা । সাথে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরনার্থী শিবির রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাশ,কাঠ,টিন ও পলিথিনে তৈরি অবকাঠামো নিয়ে রয়েছে অনেক শঙ্কা। তাই মোখার দিকে তাকিয়ে আছে আন্তর্জাতিক বিশ্বও। তবে দূর্যোগের সাথে পাল্লা দিয়ে আসা বাংলাদেশ অভিজ্ঞতার আলোকে বেশ ভালোভাবে কাটিয়ে উঠতে পারবে মোখা নামের এই বিপর্যয়টিকে এমনটাই আশা সকলের।