আমতলী উপজেলার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাসহ আইসিভিজিডি প্রকল্পের তিননজনের বিরুদ্ধে নারী কর্মীদের কু প্রস্তাব নানান অনিয়ম নিয়োগ বানিজ্য ও ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার( ৩সেপ্টেম্বর) টি এম এম এস এস( এল এফ) পদে কর্মরত জাকিয়া সুলতানা বাদী হয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসকের বরাবর এ অভিযোগ করেন। অভিযুক্তরা হলেন, ১.রুপ কুমার পাল,আমতলী উপজেলা মহিলা বিষয়ক ও অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত বরগুনা জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা । ২. আলআমিন, আমতলী উপজেলা কো-অর্ডিনেটর, টি এম এস এস, আইসিভিজিডি প্রকল্প, বরগুনা।৩.সাইফুল ইসলাম সুমন ডিভিশনাল কো-অর্ডিনেটর পটুয়াখালী ও বরগুনা জোন টিএমএসএস আইসিভিজিডি প্রকল্প।
জানা যায়,বরগুনা আমতলী উপজেলায় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায় পিছিয়ে পড়া অসহায় হতদরিদ্র নারীদের জীবনের মান উন্নয়নের লক্ষ্যে গত ৫ নভেম্বর ২০২৩ সালে আইসিভিজিডি'র ১বছর মেয়াদী টিএমএসএস'র বাস্তবায়নে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। উক্ত প্রকল্পে মোট ৫৬ টি গ্রুপে ১৩৯৩ জন সুবিধাভোগী রয়েছে। উপজেলায় প্রকল্প পরিচালনায়(এলএফ) পদে মাঠে ১১জন কর্মী নিয়োগ দেওয়া হলেও বাস্তবে(৬)জন এলএফ দিয়ে প্রকল্প পরিচালনা করে থাকে।নানান অনিয়ম আর নিয়োগ বানিজ্যের মাধ্যমে প্রকল্পের শুরু হলেও চাকরি হারানোর ভয়ে কেউ ভয়ে মুখ খোলেনি।
ঘুষের বিনিময়ে এলএফ ও ট্রেইনার পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে অযোগ্য লোক। কাগজ কলমে( ১১)জন এলএফ নিয়োগ দেখিয়ে মাঠে(৬) জন এলএফ দিয়ে কাজ করিয়ে বাকি ( ৫)এলএফ এর ভূয়া পদ দেখিয়ে মাসিক বেতন বাবদ ১৬হাজার ৫শ করে ৮২ হাজার ৫শ টাকা অর্থ আত্মসাত করেন।এলে এফ পদে নিয়োগ বাবদ ২০-৩৫ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এছাড়া (এলএফ) পদে সোহানুর রহমান নামে একই ব্যক্তিকে পলাশ নামে আলাদা ব্যক্তি দেখিয়ে ট্রেইনার পদে ভূয়া নাম দিয়ে অর্থ আত্মসাত অভিযুক্ত কর্মকর্তারা।
সুবিধাভোগী সদস্যের কাছ থেকে আর্থিক অনুদান দেয়ার কথা বলে ১হাজার ,পাশ বই বাবদ ১শ' ,হেপী ট্যাপের কথা বলে জন প্রতি ১শ ৫০টাকা হিসাবে সমিতির ১হাজার ৩শ ৯৩ সুবিধাভোগীদের সদস্য প্রতি ১হাজার ২শত ৫০টাকা আত্বাসাত করেছেন কর্মকর্তারা।
এছাড়াও গ্রুপ ভিত্তিক ট্রেনিং এর অর্থ আত্মসাৎ। ৫৬ টি গ্রুপ থাকলেও শুরু থেকে ৩৫ থেকে ৩৮টি গ্রুপকে ট্রেনিং করানো হতো কিন্তু ট্রেনিং এর অর্থ উত্তোলন করা হয় ৫৬ টি। সর্বশেষ মাসের সর্বোচ্চ ৪২টি গ্রুপের ট্রেনিং করানো হয়েছে। ৪২ টি গ্রুপ ট্রেনিং হওয়ার কথা আটটি করে কিন্তু সেখান থেকে দুটি ট্রেনিং ছয়টি করে ট্রেনিং করানো হয়েছে এবং ১৪ টি গ্রুপের ট্রেনিং একেবারেই করানো হয় নাই। যা থেকে ১৯৬ টি ট্রেনিং বাবদ ১হাজার২০০শ'টাকা করে ২ লাখ ৩৫ হাজার ২০০শ'টাকা একমাসে আত্মসাৎ করেছে.।
সমুদয় টাকা টিএমএসএসের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এল,এফ জুলিয়া ও মালাসহ টিএমএসএস'র কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সদস্যের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্বসাত ও নিয়োগ বানিজ্য করেন।একান্ত আলাপনে গোপন ভিডিও তে (এলএফ) জুলিয়া ঘুষ দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন,আমি এলএফ পদে চাকরির আবেদন করলে নাজমুল (ট্রেইনার) ভাই চাকরি নিতে হলে রুপ কুমার পাল স্যার কে ২০হাজার টাকা ঘুষ দিতে হবে বলে দাবী করলে আমি রাজি হই। চাকরি কনফার্ম হওয়ার পর ২০হাজার টাকা নাজমুল ভাইয়ের মাধ্যমে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রুপ কুমার পাল স্যারকে দেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আমতলী সদর ইউনিয়নের আইসি ভিজিডি সমিতির সুবিধাভোগী খালেদা মুঠোফোনে বলেন, আমাদের সমিতির জুলিয়া আপা আমাদের সদস্যের কাছ থেকে অনুদান, পাস বই, হ্যাপি টেপ বাবদ ১হাজার ২শ ৫০টাকা নিয়েছেন।যখন যেখানে টাকা দিতে বলত আমরা দিয়ে দিতাম।প্রকল্পের (ট্রেইনার) রুবেল মিয়া বলেন,ঘুষের বিনিময়ে ট্রেইনার পদে অযোগ্য লোক নিয়োগ দেওয়া হয়। (এলএফ) পদে সোয়ানুর রহমান নামে একই ব্যক্তিকে পলাশ নামে ট্রেনের পদে কর্মরত দেখান।
সোহানুর রহমান ও পলাশ একই ব্যক্তি আমরা একসাথে কলেজে লেখাপড়া করেছি আমি তাকে চিনি। এই মাসের ট্রেনিং বাবদ ২৫ হাজার ৯০০ টাকা সিটে লেখা থাকলেও আমাকে ২৫ হাজার টাকা বুঝিয়ে দেন বাকি ৯৫০ টাকা আল আমিন ভাই রেখে দেন। এছাড়া ট্রেইনরদের প্রাপ্য ট্রেনিংয়ের টাকা কম দেখিয়ে বাকি টাকা কর্মকর্তারা আত্মসাৎ করেন।একজন উপজেলা পদে থেকে কিভাবে এরকম আচরণ করে এটা বোধগম্য নয়।এর কঠিন বিচার হওয়া উচিত।
(এলএফ)জাকিয়া সুলতানা অভিযোগ করে বলেন,আইসিভিজিডি প্রকল্পের শুরু থেকেই ব্যাপক অনিয়ম আর ঘুষ দূর্নীতিসহ নারী কর্মীদের কু প্রস্তাব দিয়ে অপকর্ম করে আসছেন।যার নেপথ্যে আমতলী উপজেলা ও বরগুনার জেলার মহিলা বিষয়ক দপ্তরের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক রুপ কুমার পাল ও আইসিবিজিটি প্রকল্পের কর্মকর্তা আলামিন ও সাইফুল ইসলাম সুমন জড়িত রয়েছেন।
রুপ কুমার পাল অসহায় নারী কর্মীদের কাজের অজুহাতে রাতে অফিসে নিয়ে তার চরিতার্থ করে। যা একাধিকবার আমার চোখের সামনে পড়ে। একটা সরকারী অফিসে রাত ৮- ৯টা পর্যন্ত নারী কর্মী নিয়ে কিসের কাজ থাকতে পারে। রুপ কুমার পাল আমাকেও কু প্রস্তাব দেয়। রাতে অফিসে আসতে বলে,ভিডিও কলে কথা বলতে বলে কিন্তু আমি তার এসব কু প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমাকে চাকরিচ্যুত সহ ভয় ভীতি দেখান।বিষয়টি জানাজানি হলে আমাকে ম্যানেজ করার জন্য জোর তদবির শুরু করেন।
তার মত একজন চরিত্রহীন লোকের এত বড় পদে সরকারি চাকরি করার কোন অধিকার নেই।আমি তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে কঠিন বিচারের দাবীও জানাই।উপজেলা কো-অর্ডিনেটর এল.ই. ডি .সি.মো:আল আমিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,অনিয়ম করার কোন সুযোগ নেই।আমার নামে অভিযোগ মিথ্যা ও ভিওিহীন।
মাঠে ১১জন এলএফ থাকার কথা থাকলেও (৫) জন এলএফ দিয়ে কাজ করানো এবং প্রজেক্ট শেষ হওয়ার আগে ঐ(৫) জনের বদলির বিষয়ে জানতে চাইলে ডিভিশনাল কো-অর্ডিনেটর মোঃ সাইফুল ইসলাম সুমন বলেন,এটা প্রজেক্টের বিষয়,আমরা স্বচ্ছতার সাথে কাজ করি।
আমতলী উপজেলা ও বরগুনা জেলার অঃদাঃ মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রুপ কুমার পাল বলেন, নিয়োগ দেয়ার এখতিয়ার হলো প্রকল্প কর্মকর্তাদের আমি তদারকি করি, রাত ৮টা পর্যন্ত নারী কর্মী নিয়ে কিসের কাজ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অফিসিয়াল কাজ করার জন্য রাত হয়,সবাই তো রাত করে অফিস করে আমি একা করি।বরগুনা জেলা প্রশাসক মোঃ রফিকুল ইসলাম লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।