ঋণের চাপে মাত্র ৫ লাখ টাকায় ২ বছর বয়সী নাড়ি ছেড়া ধন সন্তানকে বিক্রির চেষ্টা করেছেন তিস্তা নদীর চরাঞ্চলের এক কৃষক।

গত বৃহস্পতিবার(১০ জুলাই) লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার চর সিন্দুর্না গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 

স্থানীয়রা জানান,  তিস্তা নদীর চরাঞ্চল চর সিন্দুর্না গ্রামের প্রান্তিক কৃষক হাবিবুর রহমান। গত মৌসুমে স্থানীয় ওমর আলী, আশরাফুল ও নুর আলম নামের ৩জন দাদন ব্যাবসায়ীর কাছ থেকে চরা সুদে ৩লাখ টাকা ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করেছেন। কিন্তু সেই চাষাবাদে লোকসান গুনায় ঋণের মাত্র এক লাখ টাকা পরিশোধ করেন। পরবর্তিতে বাকী টাকা সুদাসলে দাড়িয়েছে ৪ লক্ষাধিকে। কিছুদিন ধরে দাদন ব্যাবসায়ীদের চাপ বেড়েছে।অভাবের সংসার পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছেন কৃষক হাবিবুর রহমান। এক পর্যায়ে নাড়ি ছেড়া ধন দুই বছরের মেয়েকে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন তিনি। 

বিক্রির খবর শুনে পাশের গ্রামের নিঃসন্তান দম্পতি তার সন্তানকে ক্রয় করতে সম্মত হলে এক লাখ টাকা বায়না দেন। এরপর বৃহস্পতিবার সেই নিঃসন্তান দম্পতি সন্তানকে দেখতে এলে বিষয়টি বুঝতে পান হাবিবুরের স্ত্রী নুরনাহার বেগম। তখন তিনি মাতৃত্বের টানে চিৎকার শুরু করলে স্থানীয়রা ছুটে এলে বিষয়টি প্রকাশ পায় এবং তারা প্রতিহত করেন। 

খবর পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তান বিক্রেতা ক্রেতাসহ পাওনাদার দাদন ব্যবসায়ীদের ডেকে নিয়ে বৈঠক করেন। এরপর বৈঠকের সিদ্ধান্ত মতে সন্তান বিক্রি থেকে রক্ষা পান হাবিবুর। পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করতে সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়। একই সাথে কৃষক হাবিবুর রহমানের স্ত্রীকে একটি ভিজিডি কার্ড করে দেয়া হয়। 

কৃষক হাবিবুর বলেন, অভাবের সংসার। সামান্য জমি বর্গা নিয়ে চাষবাস করি। ধার-দেনা শোধে হিমশিম খাচ্ছি। এখন আর কোনো উপায় নেই। বাধ্য হয়ে মেয়েকে বিক্রির কথা ভাবেছিলাম। 

স্থানীয় বাসিন্দা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, একজন পিতা যখন ঋণের চাপে নিজের সন্তানকে বিক্রি করতে উদ্যত হয়, তখন বুঝতে হয় পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ। আমরা তা হতে দেইনি। 

সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আরিফুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ স্থানীয় ইউপি সদস্যকে পাঠিয়ে বিক্রির চেষ্টা বন্ধ করি এবং পরিবারটিকে ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে আনি। পাওনাদারদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা করার উদ্যোগ নিয়েছি। পাশাপাশি হাবিবুরের স্ত্রীর নামে ভিজিডির কার্ড করে দেওয়া হয়েছে।