এক্সিলারেট এনার্জির এলএনজি চুক্তির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ, প্রেসিডেন্ট কোবোসকে ‘ফিরে যাও’ বার্তা এক্সিলারেট এনার্জির এলএনজি আমদানি চুক্তির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণ প্রতিবাদঃ প্রেসিডেন্ট স্টিভেন কোবোসকে ফিরে যাওয়ার আহ্ববান।
এক্সিলারেট এনার্জির প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী স্টিভেন কোবোসের বাংলাদেশ সফর এবং তাদের নতুন এলএনজি চুক্তির পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আজ ঢাকা শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত পরিবেশ সচেতন তরুণদের বিশাল গণ অবস্থান অনুষ্ঠিত হয়।
ইয়ুথ ফর কেয়ার, আর্থ সোসাইটি, উপকূলীয় জীবনযাত্রা এবং পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন) এবং বাংলাদেশের প্রতিবেশ এবং উন্নয়ন বিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি)-এর সম্মিলিত আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা জোরালোভাবে ঘোষণা করেন- “Go Back Excelerate Energy! – No More LNG Deals in Bangladesh.”
তরুণ বক্তারা জানান, এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে প্রস্তাবিত দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি আমদানি ও অবকাঠামো নির্মাণ পরিকল্পনা বাংলাদেশের জন্য এক ব্যয়বহুল, পরিবেশ বিধ্বংসী এবং আমদানি-নির্ভর জ্বালানি ব্যবস্থার দিকেই ইঙ্গিত করে। তারা বলেন, “এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ দীর্ঘ সময়ের জন্য একটি আমদানি-নির্ভর ও ঋণ-চাপানো জ্বালানি ব্যবস্থার ফাঁদে পড়ে যাবে।” প্রস্তাবিত ভাসমান টার্মিনাল, সমুদ্রতলের নিচ দিয়ে সাব-সি (Sub-Sea) পাইপলাইন এবং শত শত কিলোমিটার স্থলভাগের গ্যাস পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনাকে ধ্বংস করা হচ্ছে।
তারা আরো বলেন, “বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর যেমন ক্যাপাসিটি চার্জ আছে তেমনি রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিটগুলোর সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করেও একটি নির্দিষ্ট খরচ রয়েছে। রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট অলস বসিয়ে রাখার জন্যও সরকারকে একটি নির্দিষ্ট চার্জ বহন করতে হয়।
বর্তমানে কক্সবাজারের মহেশখালিতে দুটি ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) রয়েছে, যেগুলোর দৈনিক মোট রি-গ্যাসিফিকেশন ক্ষমতা ১,০০০ মিলিয়ন ঘনফুট (প্রতিটি ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস। ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ সরকারকে প্রতিদিন ৪ লাখ ৫৪ হাজার মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হয়।
শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে আগত জলবায়ু কর্মীরা স্টিভেন কোবোসের প্রতিকৃতি বানিয়ে তাকে চুক্তি বাতিল করে দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য জোর দাবি জানায়।
এই কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন লাল সবুজ সোসাইটির আজিজুন নাহার তমা, মিশন গ্রীন বাংলাদেশের আলী আহসান রনি, উই ক্যান কক্সবাজারের ওমর ফারুক জয়, ইয়ুথনেট গ্লোবালের ফাহিম তাজনোহাদ, ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গারের সাদিয়া আফরোজ এবং সৌহার্দ্য ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের তামজিদ জিসান।
সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিইউপি, ঢাকা পলিটেকনিক, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, তেজগাঁও কলেজ এবং সিটি কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী। তাঁদের পাশাপাশি শিক্ষক, সাংবাদিক, পরিবেশবিদ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থেকে কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
আয়োজনে এক বক্তব্যে পরিবেশ আন্দোলনকর্মী ওমর ফারুক জয় বলেন, “বাংলাদেশ কোনো বিদেশি কোম্পানির গ্যাসের ডাস্টবিন নয়। আমাদের ভবিষ্যৎ বিদেশের আমদানিকৃত জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নয়, বরং দেশীয় নবায়নযোগ্য জ্বালানির উপর নির্ভর করে গড়ে উঠুক। আমরা চাই সৌর প্যানেল, চাই বাতাসের টারবাইন – পাইপলাইনে গ্যাস নয়।”
এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও ন্যায্যতা রক্ষায় একটি সুদূরপ্রসারী ও টেকসই নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। তাঁরা সরকারের কাছে দাবি জানান, যেন সকল প্রস্তাবিত এলএনজি চুক্তি বাতিল করে নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগের একটি সাহসী ও গণমুখী রূপরেখা গ্রহণ করা হয়।