ঢাকা, ৭ জুলাই ২০২৫: দেশের ওয়াকফ সম্পত্তি সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণ, এর অপব্যবহার রোধ এবং মোতাওয়াল্লীগণের অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করার দাবিতে সরব হয়েছে বাংলাদেশ মোতাওয়াল্লী সমিতি। সম্প্রতি রাজধানী ঢাকায় একাধিক মতবিনিময় সভা ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে ওয়াকফ আইনের সঠিক বাস্তবায়ন ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতার ওপর জোর দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানের বিস্তারিত:
৩ থেকে ৫ জুলাই ২০২৫ তারিখের মধ্যে ঢাকার মগবাজার, শান্তিনগর ও নবাবপুরের বিভিন্ন স্থানে (যেমন: ত্রি-ডেলস কাবাব এন্ড রেস্টুরেন্ট, ত্রি-ভোজ কাফে এন্ড রেস্টুরেন্ট, বি-ভিউ কাবাব অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, এনডি রেস্টুরেন্ট, বি-টাওয়ার কনফারেন্স রুম, টি-ভোজ কাবাব অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি) বাংলাদেশ মোতাওয়াল্লী সমিতির উদ্যোগে এসব মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসব সভায় সভাপতিত্ব করেন সমিতির আহ্বায়ক (বা সভাপতি) জনাব মোঃ মোজাহারুল হক মনসুর (সিআইপি) এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব অধ্যক্ষ কাজী বেলাল আহমদ খান।
মোতাওয়াল্লীগণের নানা সমস্যা সমাধান এবং ওয়াকফ উন্নয়ন, স্বচ্ছতা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছ প্রশাসনিক কাঠামো নিশ্চিত করার ওপর এসব সভায় বিশেষ আলোচনা হয়।
নেতৃবৃন্দের বক্তব্য ও মূল বার্তা:
সভায় মোতাওয়াল্লীগণ ও ওয়াকফ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা তাদের বিভিন্ন সমস্যা, আইনি জটিলতা এবং সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
আহ্বায়ক মোঃ মোজাহারুল হক মনসুর তার বক্তব্যে বলেন, "মোতাওয়াল্লীগণ দেশের ঐতিহ্যবাহী ওয়াকফ সম্পত্তির রক্ষাকর্তা। আমাদের উচিত এই সম্পদকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও পরিচালনা করা, যেন ভবিষ্যত প্রজন্মও এর সুফল ভোগ করতে পারে।" তিনি সকল মোতাওয়াল্লীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
সদস্য সচিব অধ্যক্ষ কাজী বেলাল আহমদ খান বলেন, "মোতাওয়াল্লীগণের মধ্যে সমন্বয় এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রধান দায়িত্ব। সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে এবং অবৈধ দখল থেকে সম্পত্তি রক্ষার জন্য সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।" তিনি আরও যোগ করেন, "ওয়াকফ একটি পবিত্র আমানত, অথচ বর্তমানে অনেক জায়গায় এর অপব্যবহার ও দখলদারিত্ব দেখা যাচ্ছে।"
মোতাওয়াল্লীগণ দৃঢ়ভাবে বলেন, "ওয়াকফ সম্পত্তি রক্ষা ও ইসলামী মূল্যবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় জাতিকে জাগতে হবে।" তাদের প্রতিপাদ্য বার্তা ছিল, "আমরা ইসি ভুক্ত ও নন ইসি ভুক্ত ওয়াকফ প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছার প্রতিফলনে সদা জাগ্রত।"
মোতাওয়াল্লীগণের প্রধান দাবিগুলো:
ওয়াকফ সম্পত্তি অবৈধ দখলদারিত্ব থেকে রক্ষা।
ওয়াকফ প্রশাসনে পূর্ণ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
মোতাওয়াল্লীগণের আইনগত স্বীকৃতি ও হয়রানি বন্ধ করা।
ওয়াকফ বোর্ডকে শক্তিশালী করে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষমতা প্রদান।
মোতাওয়াল্লীগণের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, আর্থিক সহায়তা এবং আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
নতুন প্রজন্মকে ওয়াকফ ব্যবস্থাপনায় উৎসাহিত করা।
বাংলাদেশের ওয়াকফ আইন: একটি সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা ও প্রাসঙ্গিকতা
বাংলাদেশে ওয়াকফ (وقف) বলতে এমন সম্পত্তিকে বোঝায় যা কোনো মুসলিম ব্যক্তি স্থায়ীভাবে ধর্মীয়, দাতব্য বা জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য আল্লাহর নামে উৎসর্গ করেন। এই সম্পত্তি একবার ওয়াকফ হয়ে গেলে এর মালিকানা আর দানকারীর থাকে না এবং এটি হস্তান্তরযোগ্য বা ব্যক্তিগত সম্পত্তির অংশ হিসেবে বিবেচিত হয় না। এর উদ্দেশ্য হলো সম্পত্তির আয় নির্দিষ্ট ধর্মীয় বা জনহিতকর কাজে ব্যয় করা।
বাংলাদেশে ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনার জন্য প্রধানত ‘দ্য ওয়াকফ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬২’ কার্যকর রয়েছে। এই আইন ওয়াকফ সম্পত্তির নিবন্ধন, প্রশাসন, মোতাওয়াল্লী নিয়োগ ও তাদের দায়িত্ব, সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা এবং অপব্যবহার রোধে বিভিন্ন বিধান তৈরি করেছে। এই আইনের অধীনে একজন ‘ওয়াকফ প্রশাসক’ নিয়োগ করা হয়, যার মূল দায়িত্ব হলো ওয়াকফ সম্পত্তিগুলো তদারকি করা এবং আইন অনুযায়ী এর ব্যবহার নিশ্চিত করা।
তবে, মোতাওয়াল্লী সমিতির সাম্প্রতিক সভাগুলোতে উঠে আসা অভিযোগগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, বিদ্যমান আইন থাকা সত্ত্বেও এর সঠিক প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে ঘাটতি রয়েছে। অবৈধ দখল, ক্ষমতার অপব্যবহার, এবং ওয়াকফ প্রশাসকের কার্যালয়ের কার্যকারিতায় দুর্বলতার কারণে বহু ওয়াকফ সম্পত্তি বেহাত হচ্ছে এবং মোতাওয়াল্লীগণও নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। সভাগুলোতে এই আইনকে আরও কার্যকর ও জনবান্ধব করার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের দাবি জানানো হয়েছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
বাংলাদেশ মোতাওয়াল্লী সমিতি ওয়াকফ সম্পত্তির সুরক্ষা ও উন্নয়নের জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলার এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের আরও আলোচনা সভার আয়োজন করে সচেতনতা বৃদ্ধি ও সমাধানের পথ বের করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।
আরও তথ্য জানতে:
মোতাওয়াল্লীগণের সমস্যা ও তাদের বক্তব্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে Newscast24tv-এর ফেসবুক ভিডিওগুলো দেখতে পারেন:
আহ্বায়ক মনসুর ও সদস্য সচিব অধ্যক্ষ কাজী বেলাল-এর বক্তৃতা
সরকারের কাছে অবহেলিত মোতাওয়াল্লীদের চাওয়া।