কেরানীগঞ্জের কোন্ডা থেকে হযরতপুর পর্যন্ত প্রায় ৬৫ বর্গমাইল এলাকার (সর্বমোট ৪২২টি গ্রাম) বেশির ভাগ গ্রামের হাজার হাজার গ্রাহক দীর্ঘ দিন যাবত তীব্র গ্যাস সংকটে চরম বিপাকে পড়েছেন । বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ ও ভাড়াটিয়ারা ।
তিতাস গ্যাসের ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগ,কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পূর্ব বামনশুর,পশ্চিম বামনশুর,বাবুর গ্রাম,শিকারিটোলা,নবাবচর,খোলামোড়া, হানিফ ব্যাপারির গ্রাম,কলাতিয়া, জিঞ্জিরা,চড়াইল, ডাকপাড়া, কালিন্দী, নেকরোজবাগ, মান্দাইল এবং দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার হাসনাবাদ, ইকুরিয়া, মীরেরবাগ, খেজুরবাগ, চর কালীগঞ্জ, কালীগঞ্জ, আমিন পাড়া, কৈবর্ত পাড়া, চুনকুটিয়া, হিজল তলা, শুভাঢ্যা,শুভাঢ্যা উত্তর, মধ্য,পূর্ব, পশ্চিম পাড়া, সহ প্রায় ১৫০ গ্রামে তীব্র গ্যাস সংকট চলছে।
গ্যাস ব্যবহার না করেই মাসের পর মাস বিল পরিশোধ করে আসছে হাজার হাজার পরিবার। তাদের রান্নাসহ দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে বাধ্য হয়ে এলপি গ্যাস বা কারেন্টের চুলা কিনতে হচ্ছে। কেউ-বা আবার অর্থ সংকটের কারণে লাকড়ির চুলা ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। এদিকে, গ্যাস সংকট দেখা দেওয়ায় ব্যবসায়ীরা এলপি গ্যাসের বোতলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এ কারণে আরো ভোগান্তিতে পড়েছে গ্রাহক। গ্যাসের বোতলের ব্যাপক চাহিদার সুযোগ নিয়ে স্থানীয় দোকানদাররা ১ হাজার ৫০০ টাকা করে গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে।
বামনশুর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা তামান্না খানম বলেন,, “তারা গত এক বছর ধরে গ্যাস সংকটে ভুগছেন। মাঝখানে প্রায় দুই মাস পুরোপুরি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ ছিল। বর্তমানে মাঝে মাঝে আসে আবার চলে যায়।গ্যাস সংকটের কারণে আমার চার তলা বাড়ির অনেকগুলো ইউনিট খালি পড়ে আছে।অথচ আমাকে প্রতি মাসে সবগুলো ইউনিটের গ্যাস বিলে দিতে হয় ।❞শুভ্যাড্ডা এলাকার বাসিন্দা রেবেকা সুলতানা জানান, ❝সারাদিন গ্যাস থাকে না।রাত এক টায় আসে আবার রাত চার টায় চলে যায়।তাদের সাথে বার বার যোগাযোগ করা হলে ও কোন প্রতিকার পাওয়া যায় নি।গ্যাস ও দিবে না আবার বিল ও নিবে। তা এখন আর চলতে দেওয়া হবে না। এলাকাবাসীদের সাথে কথা চলছে আমরা খুব তাড়াতাড়ি জিঞ্জিরা তিতাস গ্যাস অফিস ঘেড়াও করব প্রয়োজনে তিতাস হেড অফিস ঘেরাও করব।❞
এলাকার গ্রাহকদের অভিযোগের ব্যাপারে ঢাকা কেরানীগঞ্জ সাবস্টেশন, জোন-৫ জিনজিরা এর শাখা ব্যবস্থাপক ইনচার্জ মো তৌফিক এলাহী সবুজ জানান, ❝কেরানীগঞ্জে প্রতিদিন গ্যাসের সঞ্চালন লাইনে গ্যাসের চাপ থাকার দরকার কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ পিএসআইজি। কিন্তু বর্তমানে মাত্র ২ পিএসআইজি গ্যাস থাকায় চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহকরা গ্যাস পাচ্ছে না। তবে রাত ১০ টার পর বেশিরভাগ কারখানা গুলো বন্ধ হয়ে যায় তখন পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ বেড়ে যায়। এতে গ্রাহকরা তখন পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্যাস পেতে পারেন।❞
বর্তমান সংকট কাটিয়ে কোনো প্রকার গ্যাসের চাপ বাড়ানো সম্ভব কি না এ বিষয় নিয়ে তিতাসের উপমহা ব্যবস্থাপক বিকাশ চন্দ্র সাহা বলেন,❝তিতাস নিজে কোন গ্যাস উৎপাদন করে না শুধুমাত্র বন্টন করে। বর্তমানে গ্যাসের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম।তাছাড়া মোট উৎপাদনের মাত্র ১০ শতাংশ বরাদ্দ আবাসিক এলাকার জন্য।তাই বর্তমানে শুধু কেরানীগঞ্জ নয় মানিকগঞ্জ, মিরপুর ১০ সহ অনেক এলাকাতেই গ্যাসের সংকট দেখা যাচ্ছে।❞ এর সমাধান কবে কিভাবে হতে পারে তা সম্পর্কে তিনি সুস্পষ্ট কিছু বলতে পারেন নি।তবে তিনি জানান বর্তমান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা জনাব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এর সাথে তার কথা হয়েছে।তিনি জানিয়েছেন দীর্ঘদিনের সমস্যা এত রাতারাতি সমাধান সম্ভব নয়।তবে খুব দ্রুতই নতুন গ্যাস ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করে এই সমস্যার সমাধান করা হবে।।