কেরানীগঞ্জে মাধ্যমিক শিক্ষাকে বৈষম্য মুক্ত ও জাতীয়করণ এবং জাতীয়করণের পূর্ব পর্যন্ত শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন পদে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদায়ন বন্ধ রাখা ও শিক্ষা সংস্কার করার দাবিতে উপজেলার বেসরকারি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকগণ মানববন্ধন করেন এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।
২৪ আগস্ট সকাল ১০ টায় কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রশাসনিক কার্যালয়ের সম্মুখে উক্ত উপজেলার এমপিও ভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রসার শিক্ষকগণ মানববন্ধন করেন।মানববন্ধনে আগত বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদের সভাপতি বাবুল হোসেন বলেন,❝সদ্য পতিত ফ্যাসিষ্ট সরকার পরিকল্পিতভাবে মাধ্যমিক শিক্ষাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছে।
জুলাই- আগষ্ট ২০২৪ এর বিপ্লবের মধ্যদিয়ে ছাত্র-জনতার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন দেশ গড়ার যে স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছে তাতে আমরাও নতুন করে স্বপ্ন দেখছি মাধ্যমিক শিক্ষা আবার আবারও গতিশীল হবে,ফিরে পাবে তার প্রান। ❞ এ বিষয়ে তিনি বেশ কিছু প্রস্তাবনার কথা জানান।যেমন (১)মাধ্যমিক স্তরের প্রতিষ্ঠানের ৯৭% বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলি জাতীয়করণ করা অত্যন্ত জরুরী। একই শিক্ষাগত যোগ্যতা, একই বই পড়ানো, একই বোর্ডের আওতায় পরীক্ষা অথচ সরকারি ও বেসরকারি নাম দিয়ে আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদার মধ্যে বিরাট বৈষম্য তৈরি করে রাখা হয়েছে যা শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে প্রধান অন্তরায়। শিক্ষার সকল অংশীজনের প্রাণের দাবি মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ।
(২) শিক্ষা বিভাগের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো একাডেমিক ও প্রশাসনিক। শিক্ষকেরা একাডেমিক কাজে দক্ষ। তাদের সকল প্রশিক্ষণ পেড্যাগোজি কেন্দ্রিক। ক্লাস রুমের শিক্ষণ-শিখনে তারা দক্ষ। অন্যদিকে শিক্ষা প্রশাসনে দীর্ঘ ৩১ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের সকল প্রশিক্ষণ প্রশাসনিক। শিক্ষকতা ও প্রশাসন ভিন্ন চরিত্রের, ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের, কাজের ধরন ভিন্ন, চর্চা বা অনুশীলন ভিন্ন। শিক্ষকরা প্রশাসনে অনভিজ্ঞ, জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপপরিচালক পদে তাঁদের পদায়ন করা হলে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক শূণ্যতা যেমন সৃষ্টি হয় তেমনি ক্লাস রুম শিক্ষকতায় অভিজ্ঞ একজন শিক্ষক কে উল্লেখিত পদ সমূহে পদায়ন করা হলে বিভিন্ন বিধি বিধান সম্পর্কে পূর্ব জ্ঞান না থাকার কারণে অফিসের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন অধস্তন পদের লোকজনের পরামর্শ দ্বারাই পরিচালিত হতে হয়।
প্রশাসনিক দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে তাদের সমস্যা হয়। এ ছাড়াও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পদে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকগণকে পদায়ন করা হলে প্রশাসনিক অনভিজ্ঞ সিনিয়র শিক্ষকের অধীনে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার প্রধানগণকে কাজ করতে হবে, এতে শিক্ষাঙ্গনে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে। সে কারণে উপজেলা, জেলা, অঞ্চল ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখায় ৩১ বছর শিক্ষা প্রশাসনে কাজের দক্ষতা সম্পন্ন ৬ষ্ঠ গ্রেডভূক্ত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের পদোন্নতি ও পদায়নের জোর দাবী করছি। (৩)শিক্ষার মাঠ প্রশাসনে কাজ করা ১০-২২ বছরের দক্ষ, অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত SESIP এর জনবল রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের অসমাপ্ত কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।
(৪) বহু মাত্রিক সমস্যায় মাধ্যমিক শিক্ষা জর্জরিত। স্কুল, মাদরাসা, সরকারি, বেসরকারি, ইংরেজি ভার্সন এ ধরণের নানা রকম প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এদের মধ্যে বৈষম্য প্রকট। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে একটি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করার জোর দাবি জানাচ্ছি।উক্ত মানববন্ধনে উপস্হিত ছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার হালিমা আক্তার, বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ কফিল উদ্দিন খান। উক্ত মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন মো. আমিনুল ইসলাম, খলিলুর রহমান,গোলাম হোসেন, আইনুল, রাশেদুজ্জামান, সাইদুর রহমান প্রমুখ। বক্তারা সবাই মাধ্যমিক শিক্ষাকে জাতীয়করনের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরেন এবং মানববন্ধন শেষে তারা কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিনাত ফৌজিয়ার নিকট স্মারক লিপি জমা দেন।