নীলফামারীর সৈয়দপুরে চাঁদাবাজির সময় জনতার হাতে গণধোলাইয়ের শিকার দুই
ভুয়া সাংবাদিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে তাদের
আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে
চারটার দিকে সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের নিজাম চৌপথি
বাজারে তারা চাঁদা দাবির এক পর্যায়ে উত্তেজিত জনতার হাতে গণধোলাইয়ের
শিকার হন। পরে জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার
করে থানায় নিয়ে যায়।

গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন—সৈয়দপুর শহরের মুন্সিপাড়া এলাকার মো. রাজা
ও বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের বালাপাড়ার মো. ইবনে আলী বাবু। তারা ‘দৈনিক ক্রাইম
তালাশ’ নামের একটি অনলাইন পোর্টালের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজিতে
জড়িত ছিলেন।

রাজা পেশায় বিরিয়ানি ও কাপড় বিক্রেতা এবং কৃষক লীগের সদস্য। অন্যদিকে
বাবু একজন হলুদ বিক্রেতা, যিনি এক সময় ওলামা লীগের সদস্য ছিলেন এবং
বর্তমানে উপজেলা বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে পরিচিত। তিনি নিজেকে
‘বিএনপির সাংবাদিক’ বলেও দাবি করে থাকেন।

স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার বিকেলে তারা কথিত মাদক বিক্রেতা স্বপনের
দোকানে গিয়ে চাঁদা দাবি করেন এবং উপস্থিত ক্রেতাদের ছবি ও ভিডিও ধারণ
করতে থাকেন। ক্রেতারা আপত্তি জানালেও তারা তাতে কর্ণপাত না করে ভিডিও
ধারণ চালিয়ে যান। পরে পাশের একটি বাড়িতে মাদকদ্রব্য ফেলে দিয়ে রিপোর্ট
করার ভয় দেখিয়ে পুনরায় চাঁদা দাবি করেন। এতে উত্তেজিত হয়ে ওঠে জনতা এবং
দুজনকে আটক করে গণধোলাই দেয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তারা বিভিন্ন এলাকায় ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা
আদায় করে আসছিল। কখনো মাদক বিক্রেতা, কখনো থাই ভিসা প্রতারক সাজিয়ে
সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিলেন। সৈয়দপুর
উত্তরা আবাসনের বাসিন্দারা জানান, কিছুদিন আগে তারা ইউএনও পরিচয়ে বাড়িতে
গিয়ে ‘কার বাড়ি, কীভাবে নিলেন’—এমন প্রশ্ন করে তথ্য সংগ্রহের নামে ভয়ভীতি
দেখিয়ে অর্থ দাবি করেন। তবে ইউএনও জানিয়েছেন, তিনি কাউকে এভাবে পাঠাননি।

তোফাইলের মোড় এলাকার এক ভুক্তভোগী জানান, ভিসা ও অনলাইন জুয়া নিয়ে মিথ্যা
অভিযোগ তুলে তার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা আদায় করেন ওই দুই ব্যক্তি। তার
কাছে এ সংক্রান্ত ভিডিও প্রমাণও রয়েছে।

সৈয়দপুর শহরের মশলা ব্যবসায়ী হাজী ইসতিয়াক বলেন, “ওই দুইজন আমার মালসহ
ভ্যান আটক করে চাঁদা দাবি করে। না দেয়ায় নানাভাবে হুমকি ও হয়রানি করেছে।
এমনকি ঈদের সময় ‘সেলামি’ চেয়ে বার বার ফোন করে বিরক্ত করেছে।”

সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফইম উদ্দিন বলেন, “ভুয়া সাংবাদিক
পরিচয়ে চাঁদাবাজির সময় জনতা তাদের আটক করে। পরে ৯৯৯ নম্বরে কলের পর পুলিশ
গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। রাতে ভুক্তভোগী স্বপন তাদের বিরুদ্ধে ২০ হাজার
টাকা চাঁদাবাজি ও মাদক মামলা দায়ের করেন।”

উল্লেখ্য, যেই অনলাইন পোর্টালের পরিচয়ে তারা এসব কর্মকাণ্ড করছিলেন, সেই
‘দৈনিক ক্রাইম তালাশ’-এর সৈয়দপুর ব্যুরো প্রধান লোকমান হাকিম বুধবার এক
ফেসবুক লাইভে এসে অভিযুক্তদের সংগঠন থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে
তাদের অপরাধের দায়ভার তিনি নিতে অস্বীকৃতি জানান।