গলাচিপা উপজেলার সদর ইউনিয়নের পক্ষিয়া বোয়ালিয়া গ্রামে তরমুজ গাছে ক্ষেত ভরা থাকলেও ফলন নেই। ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, বীজে ভেজাল থাকায় তাদের এই ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় ১১ হাজার ৭ শত ৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন কৃষকরা। গত বছর চাষ হয়েছিল ১০ হাজার ৫শত হেক্টর জমিতে। লাভজনক হওয়ায় এ ফসল চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা। গলাচিপা সদর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া ও পক্ষিয়া গ্রামে সবচেয়ে বেশি তরমুজ চাষ হয়ে থাকে। গলাচিপা সদর ইউনিয়নে এবার তরমুজ চাষ হয়েছে ৭ শত ৮৫ হেক্টর জমিতে। তবে এ বছর ওই দুই গ্রামের দেড় শতাধিক কৃষকের ৩০০ হেক্টর জমির ফলনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় উৎপাদিত তরমুজ বিক্রি শুরু হলেও ওই গ্রামের কয়েকশ চাষির ক্ষেতে এখনও ফলন নেই। যদিও তরমুজের সবুজ গাছে ক্ষেত ভরে আছে। এ অবস্থায় কৃষকরা হতাশ হয়ে এখন চোখের জল ফেলছেন।
সূত্র আরও জানায়, অনেকেই নিজের সব পুঁজি বিনোয়োগ করে কেউবা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এবং স্বজনদের কাছ থেকে ধারদেনা করে তরমুজ চাষ করেছিলেন লাভের আশায়। সোমবার সকালে পশ্চিম বোয়ালিয়া ও পক্ষিয়া গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, মাঠজুড়ে সবুজ তরমুজ, দু-একটি গাছে ফুল এলেও তাতে কোনো ফলন নেই। বিষয়টি নিয়ে কথা হয় চাষি ফজলুল হক মৃধা, আতিকুর রহমান, জাহিদ হাওলাদার, রাজ্জাক হাওলদার, মজনু মৃধা, হালিমা বেগম, শওকত মৃধার সঙ্গে। তারা জানান, আশপাশের গ্রামের চাষিদের সঙ্গে তরমুজ চাষ করলেও এখন শুধু তারাই বিপদে পড়েছেন। জাহিদ হাওলাদার বলেন, '৫ একর জমিতে আড়াই লাখ টাহা খরচ হইর্যা তরমুছ লাগাইছি। এহোনো গাছে কোনো তরমুজ অয় নাই। মনে হয়, আর অইবে না। ধারদেনা কইর্যা তরমুজ লাগাইছি। এহন হেই টাহা কি দিয়া দিমু।আরেক চাষি আঃ রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, '৬ একর জমিতে এনজিওর টাকা লোন (ঋণ) আইন্যা তরমুজ লাগাইছি। তরমুজ না অইলে কিস্তি দিমু কি দিয়া।' ফজলুল হক মৃধা বলেন, 'মোরা এইবার বেশি লাভের আশায় বিগ ফ্যামিলির কোম্পানির তরমুজ আটি লাগাইছি। হেইতেই মোগো সর্বনাশ অইছে। কোম্পানি মোগো ভেজাল বীজ দিছে।'
এহনো কোনো তরমুজ অয় নাই। খরচ উডামু কি দিয়া, হেই চিন্তায় রাইতে চোহে ঘুম আহে না।
সিনজেনটা গলাচিপা ডিলার খোকন পোদ্দার বলেন, কোম্পানি যে বীজ সরবরাহ করেছে, তিনি তা কৃষকদের মধ্যে বিক্রি করেছেন মাত্র। সিনজেনটার নাম করে একটি কুচক্রি মহল বাজারে নিন্ম মানের ড্রাগন জাতের বীজ প্যাকেটে ক্রয় করে ক্ষেতে বপন করেছে প্রায় অর্ধশতাধিক তরমুজ চাষি। এই নিন্মমানের ড্রাগন বীজ বপন করায় কৃষকের ক্ষেতে ছোট ছোট বিভিন্ন জাতের তরমুজের ফলন হয়েছে। যা বাজারজাত করতে পারেনি কৃষকরা। ফলে ড্রাগন তরমুজ চাষীদের প্রায় অর্ধকোটি টাকার লোকশান হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজু আক্তার বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। বীজের কারণে এ রকম সমস্যা হতে পারে। তবে আমরা বীজ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সঠিক কারণ নির্ণয় করা যাবে।