পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানের দিকে ছুটছেন। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন বন্যার্তরা। গাইবান্ধা শহর রক্ষা বাঁধ ও ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ঘাঘট নদীর পানি শহর পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া ব্রহ্মপুত্রের পানি তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির চাপে গাইবান্ধা শহর রক্ষা বাঁধের ডেভিড কোম্পানি পাড়া ও কুঠিপাড়া এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নে কেতকিরহাট এলাকায় ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটির দুইপাশে বৃষ্টির পানিতে ধসে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানির চাপে যে কোন মুহূর্তে ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে।
দুপুরে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের কুন্দেরপাড়া চর সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, অন্তত ২ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের বাড়িঘর হাঁটু থেকে কোমর পানিতে নিমজ্জিত। স্থানীয় বাসিন্দা অবিরাম বেগম জানান, চারদিন ধরে তারা পানিতে বসবাস করছেন। এক সপ্তাহ আগে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে তার বাড়িঘর, ভিটেমাটি বিলীন হয়েছে। লোকজনের সহায়তায় কোনো রকমে একটি ঘর রক্ষা করে অন্যের জায়গায় মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেন। কিন্তু বন্যার কারণে তিনি সেই ঘরে থাকতে পারছেন না। তার ঘরে এক হাঁটুপানি। ঘরের মধ্যে চৌকি ইট দিয়ে উঁচু করে কোনো রকমে রাতে ঘুমান।
একই গ্রামের আছিয়া বেগম ও স্বামী ময়েজ উদ্দিন। ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে তারাও ভিটেমাটি হারিয়েছেন। ঘরের মধ্যে কোমর পর্যন্ত পানি উঠায় তারা ঘরে থাকতে পারেন না। দিনের বেলা পানির স্রোত থেকে ঘরের জিনিসপত্র রক্ষায় ব্যস্ত থাকেন। কুন্দেরপাড়া আশ্রয় কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় মাঠটি উঁচু হওয়ায় সেখানে তারা খোলা আকাশের নিচে রাত কাটান। আমিনুল ইসলাম ও হাজিরন বেগম দম্পতিরও একই অবস্থা। গত চারদিন ধরে বাড়িঘরে পানি উঠেছে। তাদের রান্না করে খাবার জায়গা নেই। নদী ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে অন্যের জায়গায় আশ্রয় নিলেও সেখানে বন্যা হানা দিয়েছে। তারা বিশুদ্ধ পানি ও শুকনা খাবার পাওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন।