এ ঘটনায় গুরুতর আহত তাঁর এক বছর বয়সী শিশুকন্যাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার পথে মারা যাই। পারিবারিক কলহের কথা স্বীকার করছে নিহতের স্বামী।সোমবার(৯ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শ্রীপুর উপজেলার সাতখামাইর রেলওয়ে স্টেশনের উত্তর পার্শে এ ঘটনা ঘটে।নিহত গৃহবধূ নাসরিন আক্তার ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার টাঙ্গাব গ্রামের মো. রাসেল মিয়ার স্ত্রী। তিনি গোপালগঞ্জ জেলার এনামুল হক বিশ্বাসের কন্যা। স্বামীর সঙ্গে শ্রীপুর ভাড়া থাকতেন নাসরিন আক্তার। ১১ মাস বয়সী শিশুকন্যা রওজাতুল জান্নান রাফসা রাসেল-নাসরিন দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান।প্রত্যক্ষদর্শী পারভীন আক্তার বলেন, ওই নারী সকাল থেকে সাতখামাইর রেলওয়ে স্টেশনের কাছে একটি আম গাছের নিচে বসে ছিলেন। অনেক সময় ওই নারী মোবাইল ফোনে কয়েক দফা কথাবার্তা বলে কান্নাকাটি করে। এর কিছুক্ষণ পর ময়মনসিংহগামী জামালপুর কমিউটার ট্রেন এলে ওই নারী তার শিশুকন্যাকে নিয়ে চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেয়। এতে শিশুটি ট্রেনের সঙ্গে আঘাত পেয়ে দূরে ছিটকে পড়ে। গুরুতর আহত শিশুকন্যাকে আমি উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যাই। এরপর চিকিৎসক দ্রুত তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠান। ততক্ষণে আহত শিশুর বাবা রাসেল ও চাচা সাগর হাসপাতালে চলে আসে। এরপর গুরুতর আহত শিশুকে অ্যাম্বুলেন্স যোগে ঢাকায় নিয়ে যায়।নিহতের স্বামী মো. রাসেল মিয়া বলেন, আমি স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় ভাড়া থেকে স্থানীয় একটি কারখানায় চাকরি করি। গত তিন দিন ধরে আমি কর্মস্থলে যাচ্ছি না। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হয়। সামান্য ঝগড়াঝাঁটি হয়। তাকে মারধর করিনি, সকালে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। মোবাইল ফোনের আওয়াজে ঘুম ভাঙতেই ফোন রিসিভ করলে অপর প্রান্ত থেকে স্ত্রীর জানায় সে মেয়েকে নিয়ে বাসা থেকে চলে গেছে, আর ফিরবে না।তিনি আরও বলেন, আমি বিছানা থেকে তড়িঘড়ি করে উঠে স্ত্রীর ফোনে আবারও ফোন দিয়ে তার অবস্থান জানার চেষ্টা করি। কিন্তু সে কিছুই জানায়নি। আমি অনেক চেষ্টা করেও তার লোকেশন পায়নি। এর কিছুক্ষণ পর ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেওয়ার বিষয়টি জানতে পারি। হাসপাতালে এসে শিশুকন্যাকে গুরুতর আহত অবস্থায় পাই। শ্রীপুর উপজেলা হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার দিকে রওনা হই। পথেই মারা যাই আমার বাচ্চাটা। স্ত্রীর মরদেহ কোথায় আছে বলতে পারব না।নিহতের দেবর সাগর মিয়া বলেন, মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। ঘটনাস্থলে ভাবির মরদেহ পড়ে রয়েছে। সেখান থেকে দ্রুত হাসপাতালে ছুটে এসে অ্যাম্বুলেন্সে করে শিশুকন্যাকে নিয়ে ঢাকায় রওনা করি। কীভাবে কী হয়েছে কিছুই বলতে পারব না।বরমী ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. নাজমুল আকন্দ রনি বলেন, খবর পেয়ে আমি সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। নিহতের স্বজনরা ঘটনাস্থলে এসেছেন। রেলওয়ে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে। আহত শিশুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সুস্মিতা সাহা বলেন, গুরুতর আহত শিশুটিকে এক নারীসহ কয়েকজন মিলে হাসপাতালে নিয়ে আসে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। মাথায় গুরুতর আঘাত রয়েছে শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)মোঃ জয়নাল আবেদীন মণ্ডল জানান , ট্রেনে নিচে ঝাঁপ দিয়ে নারীর মৃত্যুর বিষয়টি জেনে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।