গাজীপুর মহানগরের পোড়াবাড়ী (মাস্টারবাড়ী) এলাকায় বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে শিক্ষার্থী সিয়ামকে (১৯) হত্যার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থী ও সচেতন নাগরিক সমাজ। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন (নিসআ), গাজীপুর জেলা শাখা ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
গত ৮ মে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক ঘটনায় হাফ ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে তাকওয়া (মিনি) পরিবহনের এক হেলপার চলন্ত বাস থেকে কলেজ শিক্ষার্থী সিয়ামকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। পেছন থেকে আসা দ্রুতগতির অজ্ঞাত যানবাহনের চাপায় ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। নিহত সিয়াম রোভার স্কাউট স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং গাজীপুর সদর উপজেলার বাউপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
ঘটনার পর বাসচালক ও হেলপার পালিয়ে গেলেও স্থানীয় জনতা তাকওয়া পরিবহনের বাসটি আটক করে পুলিশে দেয়। তবে এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
এই ঘটনা নিয়ে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন (নিসআ) গাজীপুর জেলা শাখার পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,
“এই নির্মম ও অমানবিক হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। শিক্ষার্থীরা হাফ ভাড়ার যে সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখে, তা নিয়ে বিতর্কের জেরে হত্যাকাণ্ড আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার চরম ব্যর্থতার প্রতিফলন।"
সংগঠনটি চারটি দাবি পেশ করেছে:
১. ঘটনার সাথে জড়িত চালক ও হেলপারকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
২. নিহত শিক্ষার্থী সিয়ামের পরিবারকে রাষ্ট্রীয় ক্ষতিপূরণ প্রদান।
৩. গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া বাস্তবায়নে মনিটরিং টাস্কফোর্স গঠন।
৪. ‘নিরাপদ সড়ক আইন ২০১৮’ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন।
এ বিষয়ে নিসআ গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি রাকিব হাসান বলেন,
“ হাফ পাশ কোনো ভিক্ষা নয়, এটি একজন শিক্ষার্থীর অধিকার। আর এই অধিকারের জন্য যদি শিক্ষার্থীদের হত্যা করা হয়, তাহলে এটা সম্পূর্ণ রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। সিয়াম হত্যায় অভিযুক্ত চালক ও হেলপারকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আটক করতে হবে, অন্যথায় নিরাপদ সড়ক আন্দোলন - নিসআ গাজীপুর জেলা কঠোর আন্দোলনে যাবে ইনশাআল্লাহ।”
এদিকে ঘটনাস্থলে এখনো ক্ষোভ বিরাজ করছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে। তারা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছেন, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে এবং আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।