গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি নির্মাণাধীন কারখানায় কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে উপজেলার কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামের আরমাদা স্পিনিং কারখানায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত তিন শ্রমিক হলেন—নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কচ্ছপিয়া গ্রামের মো. আজাদের ছেলে মো. পিয়াস (২০), একই এলাকার বেলাল সওদাগরের ছেলে পাভেল (২৩) ও জামালপুরের বকশিগঞ্জ উপজেলার বগারচর এলাকার মুকুল মিয়ার ছেলে মনোয়ার হোসেন (২৫)। তিন শ্রমিকই ওই কারখানার নির্মাণপ্রতিষ্ঠান আলিফ এন্টারপ্রাইজের দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক ছিলেন। শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশন কর্মকর্তা ইফতেখার হোসেন রায়হান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বালুর নিচ থেকে তিনজনের মরদেহ দেখতে পেয়েছি। খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি যে নির্মাণ শ্রমিকেরা ভবনের ওপর রড তোলার কাজ করছিলেন।
এই কাজ করার সময় উচ্চ ভোল্টের একটি বৈদ্যুতিক তারের সঙ্গে রডের সংস্পর্শ ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এ বিষয়ে আরও তথ্য জানতে তদন্ত করা হবে।’ তবে লাশ তিনটি বালুর নিচে থাকার কারণ জানতে চাইলে ইফতেখার হোসেন বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। ওই কারখানার শ্রমিকেরা বিষয়টি হয়তো জানেন। দুর্ঘটনার পর নির্মাণাধীন কারখানাটি ঘুরে দেখা গেছে, নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের সামনে দুটি বালুর ঢিবি আছে। এর মধ্যে একটি ঢিবিতে লাশ তিনটি বালুচাপা দেওয়া অবস্থায় ছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কারখানার এক কর্মচারী বলেন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার পর তিন শ্রমিকের শরীরে আগুন ধরে গিয়েছিল। আগুন নেভানোর জন্যই তাঁদের বালুর ঢিবিতে ফেলা হয়েছিল। কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এইচআর, অ্যাডমিন অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স) আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নির্মাণকাজটি একটি নির্মাণপ্রতিষ্ঠানকে দিয়েছিলাম। তারা সেখানে তাদের দায়িত্বে কাজ করছিল।
আমি সেখানে ছিলাম না। সকালে সেখানে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের খবর পাই। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দেখি, বিদ্যুতায়িত হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এটা কীভাবে ঘটেছে, তা নির্মাণপ্রতিষ্ঠানের লোকজন বলতে পারবেন।’ তবে নির্মাণের দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠান আলিফ এন্টারপ্রাইজের কাউকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। তাই এ বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এদিকে লাশ তিনটি উদ্ধারের পর সুরতহাল করছে শ্রীপুর থানার পুলিশ। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে শিল্প পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উপস্থিত আছেন। দুর্ঘটনার পর ওই কারখানার বিদ্যুৎ–সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। বিদ্যুতায়িত হওয়া বড় লোহার রডটি নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে রাখা হয়েছে। গাজীপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (কালিয়াকৈর সার্কেল) আজমীর হোসেন বলেন ঘটনাস্থল থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নির্মাণাধীন কারখানায় কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হবে। এ ছাড়া ওই কারখানার ‘সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটির’ দায়িত্বে থাকা কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।