গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে আসে। অতঃপর এই সংবাদের ফলোআপ তথ্য সংগ্রহের জন্য দৈনিক সংবাদ প্রতিদিনের জেলা প্রতিনিধি পরিষদে গেলে সাংবাদকর্মী মোজাহিদ ভিডিও ধারণ করার সময় তোফাজ্জল চেয়ারম্যান পেছন থেকে তেড়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে এবং মোজাহিদের গলায় চেপে ধরে, শুধু তাই নয়, শ্বাসরোধ করে হত্যাচেষ্টা করে।

এরপর তার লোকজনকে নির্দেশ দিলে ২০-২৫ জন তোফাজ্জল সমর্থক সংবাদকর্মীকে এলপাথাড়ি মারতে থাকে। এসব ঘটনার প্রমাণ ইউনিয়ন পরিষদের সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করলে পাওয়া যাবে। এই মারামারির পর সাংবাদিক মোজাহিদের দুইটি এন্ড্রোয়েট ফোন এবং একটি ব্যাগ নিয়ে যায়। এদিকে রাস্তা নির্মাণ ব্যয়ে  অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের তদন্তে গেলে তদন্ত  কমিটির সামনেই ইউপি সদস্যদের হামলা করে তোফাজ্জলের সন্ত্রাসী বাহিনী। গত বুধবার (১২ অক্টোবর) সাংবাদিকের উপর হামলার এ ঘটনা ঘটে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে। আর এর ঘন্টাখানেক আগে উপজেলার পোষাইদ গ্রামে তদন্ত কমিটির সামনে ইউপি সদস্যদের মারধরের ঘটনা ঘটে।  

হামলা চলাকালে তদন্ত কমিটির প্রধান গাজীপুর স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান, উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম ও থানা-পুলিশ ও গ্রাম পুলিশের একাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এরপর তদন্ত কমিটি তদন্ত শেষ না করেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যায়। এ ঘটনায় বরমী ইউনিয়ন পরিষদের ৯ জন ইউপি সদস্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। পৃথক দুটি হামলায় সাংবাদিক মোজাহিদ ও আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন । অভিযুক্ত তোফাজ্জল হোসেন বরমী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং তিনি ওই ইউনিয়নের মাইজপাড়া গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে। 

বরমী ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. হাদিউল ইসলাম বলেন, ‘গত ৬ অক্টোবর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দুর্নীতির অভিযোগ এনে ইউনিয়ন পরিষদের ৯ জন সদস্য মিলে গাজীপুর জেলা প্রশাসক বরাবর অনাস্থা প্রস্তাব দিই। এর ধারাবাহিকতায় বুধবার সরেজমিনে তদন্তে আসে গাজীপুর স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান। এরপর তদন্ত কমিটির প্রধান আমাদের মেম্বারদের ফোন করে যেতে বলে। এ সময় আমরা সকল মেম্বাররা ঘটনাস্থলে যাওয়ার পরপরই চেয়ারম্যানের ভাড়া করা চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে কমবেশি প্রায় সব সদস্য আহত হয়। এ ঘটনায় আমরা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।’

চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নামমাত্র প্রকল্প দিয়ে অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, মেম্বারদের অনাস্থাচেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নামমাত্র প্রকল্প দিয়ে অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, মেম্বারদের অনাস্থা শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘বরমী ইউনিয়ন পরিষদের ৯ জন ইউপি সদস্য আমার কাছে এসেছেন। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। গাজীপুর স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, বুধবার দুপুরে বরমী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত পৌঁছানোর পরপরই ঘটনাস্থলে একটু হট্টগোল হয়। এরপর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তদন্তকাজ শেষ না করেই চলে আসি। এ ঘটনার তদন্ত পরবর্তীতে হবে।

সংবাদ সংগ্রহকালে চেয়ারম্যান কর্তৃক হামলার শিকার হয়ে চেয়ারম্যানসহ মোট চারজনকে আসামি করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন সাংবাদিক মোজাহিদ। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমাকে এতোই মেরেছে, আমার দুই কান দিন রক্তক্ষরণ হচ্ছে। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদের সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করে চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আমজাদ হোসেন বলেন, শুধু সাংবাদিক নয়, দেশের কোনও নাগরিকের শরীর হাত তোলার কোনও অধিকার নেই। এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অপরাধী যতই বড়ই হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করবো। 
শ্রীপুর থানার ওসি মোহাম্মদ  মনিরুজ্জামান বলেন, পৃথক দুইটি ঘটনাই দুঃখজনক। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।