কথায় আছে, গাছ ভালো হলে তার ফলও ভালো। চুয়াডাঙ্গার খেজুরের গুড় এই কথার প্রকৃত উদাহরণ। সরেজমিনে এর উৎপাদন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট হয় এর গুণগত মান। শীতের মৌসুমে খাঁটি খেজুরের গুড়ের চাহিদা বেড়ে যায়। তবে চুয়াডাঙ্গার গুড়ের স্বাদ ও মান অন্য অঞ্চলগুলোর তুলনায় আলাদা। গুড় তৈরির প্রথম ধাপ হলো গাছ প্রস্তুত করা। চুয়াডাঙ্গায় এটি ‘ঝুড়া’ নামে পরিচিত। গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে একে ৫-৭ দিন শুকানো হয়। এরপর ‘চাচ’ দেওয়া হয়, অর্থাৎ গাছের নির্দিষ্ট অংশ কেটে পরিষ্কার করা হয়। শুকানোর পর গাছের নির্দিষ্ট স্থানে ‘ফুট’ দিয়ে রস সংগ্রহ শুরু হয়। চুয়াডাঙ্গার গাছিরা মাটির কলস বা ‘ভাড়’ ব্যবহার করেন। অন্য অঞ্চলের মতো এখানে কোনো চুন মেশানো হয় না। রস সংগ্রহের পাত্র প্রতিবার জীবাণুমুক্ত করা হয়। এই পদ্ধতি রসকে স্বাস্থ্যকর এবং গুড়ের মান বজায় রাখে। চুয়াডাঙ্গায় গাছ কাটার পরপরই রস সংগ্রহ করা হয় না। প্রথম দিনের রসকে বলা হয় ‘জিড়ান রস’ এবং দ্বিতীয় দিনের রসকে ‘দোকাট’। এই প্রক্রিয়া গাছ ও রসের গুণগত মান বজায় রাখতে সাহায্য করে। রস জ্বাল দিয়ে ঘন করলে পাটালি গুড় তৈরি হয়। খাঁটি পাটালি শক্ত ও দীর্ঘস্থায়ী নয়। চিনি মেশানো হলে তা খাঁটি থাকে না। তাই চুয়াডাঙ্গার দানাগুড় হয় স্বাস্থ্যকর ও মানসম্মত। চুয়াডাঙ্গার গুড়ের বিশেষত্ব হলো এতে কোনো চিনি মেশানো হয় না। নিম্নমানের রস দিয়ে ঝোলা গুড় তৈরি হলেও চুয়াডাঙ্গার গুড় থাকে গুণগত মানে সেরা। চুয়াডাঙ্গার গাছিরা প্রাকৃতিক উপায়ে স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু গুড় তৈরি করেন। তাই চুয়াডাঙ্গার খেজুরের গুড় গুণে ও মানে অনন্য।