শিমুল ফুলের আভা জানান দিচ্ছিল বসন্ত বুঝি এলো রে এলো । আমাদের এইদেশ ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। প্রতিটি ঋতুই যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর কিন্তু বসন্ত এলেই বোঝা যায় কতটা সুন্দর এই ঋতু । চারিপাশে নানা বর্ণের ফুলে ফুলে সাজানো এই দেশটা। শীতের বিদায়লগ্নে আর ঋতুরাজ বসন্তের শুরুতেই গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য শিমুল ফুলের লাল পাঁপড়িতে নতুন সাজে সেজে উঠতো প্রকৃতি। এতে সাহিত্যিকরা খুঁজে পায় সাহিত্যের কাব্যিক ভাষা। আর ঐতিহ্যপ্রেমীরা মুগ্ধ হয়ে ফুলের দৃষ্টিকাব্য উপভোগ করে থাকতো। জেলা ও উপজেলার গ্রামাঞ্চলের পথে-প্রান্তরে, নদী বা পুকুরপাড়ে, মাঠে-ঘাটে এবং অফিসের ধারে রক্তিম ফুলের নান্দনিক সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়ে প্রকৃতির কোলে।
তবে আজ অম্লান অতীতের স্মৃতি। তেমন একটা চোখে পড়ে না ফাগুনের রঙে রাঙানো রক্তলাল শিমুলের গাছ। দিনদিন কমে যাচ্ছে মূল্যবান শিমুলের সংখ্যা। একটা সময় ছিলো আগে প্রচুর শিমুল গাছ দেখা যেত। আর এই গাছের উৎপাদিত তুলা গ্রাম-গঞ্জে খুব জনপ্রিয় ছিল। এছাড়া,ঔষধি গাছ হিসেবেও বেশ পরিচিত ছিল । গাও-গ্রামের মানুষ বিষ ফোড়া এবং কোষ্ঠ কাঠিণ্য নিরাময়ে ব্যবহার করতো শিমুল গাছের মূল। এই শিমুল গাছের তুলা দিয়ে বালিশ, লেপ-তোষকসহ হরেক রকমের বেডিং নিমার্ণে কোনো জুড়ি ছিল না। নিজের শিমুল গাছের তুলা বিক্রি করে সাবলম্বী হয়েছে অনেক মানুষ, এমন নজিরও আছে হাজার হাজার।
আবার শিমুল তুলা কুড়িয়ে বিক্রি করে উপার্জনও করতো অনেক গ্রাম্য মানুষ। ফাগুনের প্রথমেই লাল রঙের রঙিন পাঁপড়িতে রাঙিয়ে যেত শিমুল গাছ আর চৈত্রের শেষে ফুটন্ত তুলা। বাতাসের সাথে উড়ে উড়ে মাতিয়ে রাখতো প্রকৃতিকে। সাদা তুলায় ঢেকে যেত যেন নীল আকাশটা। তখন পরিবেশটাও হতো অন্যরকম। কিন্তু গ্রাম-বাংলার বুক থেকে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে মূল্যবান এই শিমুল গাছ। যা এক সময় অর্থনৈতিক সম্বৃদ্ধি এনে দিত এই শিমুল গাছ । যখন কোনো কিছু প্রকৃতি থেকে খোয়া যায়, তখন তার কদরও অনেকগুণ বেড়ে যায়। আর শিমুল গাছ ও ফুল হচ্ছে তেমন । তাই আসুন সকলে মিলে গাছ লাগাই এবং গাছের পরিচর্চা করি। একদিকে যেমন প্রাণ বাঁচবে অন্যদিকে তেমনই প্রকৃতির সৌন্দর্যও বাড়বে বলে ধারণা এলাকার প্রবীণ ও সচেতন জনগণের।