ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় বেসরকারি সংস্থা কো-ইড স্কুলের টিনসেট ঘর সহ আসবাবপত্র গায়েব করলেন সাবেক সভাপতি। এতে খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন শিক্ষকরা। সরেজমিনে গত রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১ টার সময় উপজেলার চরমানিকা ইউনিয়ন ৮ নম্বর ওয়ার্ড মধ্য চরআইচা কো-ইড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওই স্কুলের পাশ্ববর্তী রফিক মাতাব্বরের বাড়ির ওঠানে খোলা আকাশের নিচে শিক্ষকরা পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন এমন চিত্রই দেখা গেছে। এতে পাঠদানসহ সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে কো-ইড স্কুলটির। চরআইচা কো-ইড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. জিসান, সাকিব, সেলিনা ও তৃতীয় শ্রেণীর তানহা জানায়, গত ২৭ আগষ্ট রবিবার বিদ্যালয়ে এসে দেখি স্কুল ঘরটি সহ আসবাবপত্র উধাও, এরপর শিক্ষকরা আমাদেরকে দোকানের সমানে বসিয়ে পরীক্ষা নেন। পরর্বতীতে পরীক্ষা শেষ হলে আমাদেরকে শিক্ষকরা বিভিন্ন জায়গায় রোদবৃষ্টি অপেক্ষা করে খোলা আকাশের নিচে বসিয়ে পাঠদান করাচ্ছেন। আমরা মাটিতে বসে কষ্ট করে ক্লাস করতে হয়। প্রায় সময় আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। এ সময় তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে কো-ইড স্কুল ঘরটি ফিরে পেতে দাবি জানান। স্থানীয় মো. মুরাদ ফরাজি, রিয়াজ, ও মো. সবুজ বলেন, ২০০৬ সন থেকে মধ্য চরআইচা কো-ইড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি দীর্ঘ ১৭ বছর যাবত এখানে দেখে আসছি।
কিন্তু গত ২৫ আগষ্ট গত শুক্রবার ভোর রাতে কো-ইড স্কুলের সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. বশিরউল্লাহ মিয়া স্কুলটি ভাংচুর করে গায়েব করে দেন। এতে খোলা তারিখে বিদ্যালয় আসা শিক্ষার্থীরা বিপক্ষে পরে যান। তারা আরো বলেন, সভাপতি স্কুলটি গায়েব করায় বর্তমানে শিক্ষার্থীদেরকে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করানো হচ্ছে। এবং শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে স্কুলটি একই জায়গায় বহাল রাখার দাবী জানান তারা। মধ্য চরআইচা কো-ইড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ২০০৬ সনে চরমানিকা ইউনিয়নের চর আইচা গ্রামে অস্ট্রেলিয়ান সংস্থার আর্থয়ানে মধ্য চরআইচা কো-ইড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ ১৭ বছর ৫ জন শিক্ষক দিয়ে স্কুলটি পরিচালিত হয়ে আসছে। সম্প্রতি সময়ে ওই বিদ্যালয় এলাকায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কো-ইড স্কুলের জায়গায় ঘূর্ণীঝড় কাম সাইক্লোন সেল্টার নির্মান হলে ওই খানে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চালু রাখার কথা থাকলেও কো-ইড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি বশির উল্লাহ মিয়া ওই ঘূর্ণীঝড় কাম সাইক্লোন সেল্টার নতুন করে পূর্ব চর আইচা আদর্শ বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি বিদ্যালয় চালু করেন। এ নিয়ে দুই স্কুলের মধ্যে দ্বন্দ শুরু হয়। এবং বশির উল্লাহ মিয়ার প্রতিষ্ঠিত নতুন স্কুলটিতে শিক্ষার্থী শুন্য থাকায় কো-ইড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীদের ভাগিয়ে নিতে গত শুক্রবার ভোর রাতে স্থানীয় প্রভাবশালী বশির উল্লাহ মিয়ার নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের টিনসেট ঘরটি ভেঙে গুড়িয়ে গায়েব করেদেন। এবং বিদ্যালয়ে থাকা আলমিরা টেবিল চেয়ার ও শিশুদের বেঞ্চ ও প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র ছিনিয়ে নেন।
এতে আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিপক্ষে পড়ি। বর্তমানে রাস্তা ঘাটে এবং মানুষের বাড়িতে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছি। এসময় তিনি বিদ্যালয়টি দ্রুত সময়ের মধ্যে ফিরে পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ বিষয়ে স্কুল সভাপতি বশির উল্ল্যাহ মিয়া ও তার ছেলে এমদাদুল হক বাকের বলেন- আমার পিতা- ও দাদী কো-ইড স্কুলের নামে কোন জমি দান করেননি। তারা ২০০৬ সনে পূর্ব চরআইচা আদর্শ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে ৪৬ শতাংশ জমি দান করেন। সে নামে আমরা একটি বিদ্যালয় পরিচালনা করে আসছি। আমাদের বিদ্যালয়ের জন্য স্থানীয় এমপি ভবনের ব্যবস্থা করেন। ভবনের কাজ চলাকালীন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান টিনসেটের একটি ঘর করেন। তাদের কাজ সমাপ্ত হওয়ায় তারা ওই ঘর ভেঙে নিয়ে গেছেন। আমরা ওই ঘর ভাঙিনি। কো-ইড ইতিপূর্বে দুটি মামলা করেছে, ওই মামলা খারিজ হয়ে যায়। বর্তমানে তারা আমাদের স্কুলটি জাতীয় করতে বাঁধা দিচ্ছে। এবং আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মামুন ট্রেডার্সের প্রোপাইটার ইউনুস আল মামুন বলেন, আমরা কোইড স্কুল কোনো ভাঙবো আমাদের তো কাজ এখনো সমাপ্ত হয়নি। চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব থাকা সহকারী কমিশনার ভূমি আবুল মতিন খান জানান, এ বিষয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। আদালতের রায় অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।