“ক্ষমতার উৎস দিল্লি নয়, লন্ডন নয়, বসুন্ধরা নয়, এস আলম নয়—ক্ষমতার উৎস একমাত্র জনগণ।”
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিকাল ৫টায় মেহেরপুরের গাংনী বাসস্ট্যান্ডে আয়োজিত ‘জুলাই পদযাত্রা’র পথসভায় এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “জনগণ যদি পাশে থাকে, তাহলে দিল্লিতে পালাতে হয় না, লন্ডনে থাকা লাগে না। জনগণের শক্তিই রাজনীতির একমাত্র বৈধ উৎস।”
‘বিদেশ নির্ভরতা নয়, জনগণ নির্ভরতা চাই’
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “আমরা পিন্ডির ওপরে, দিল্লির ওপরে, লন্ডনের ওপরে বা আমেরিকার ওপরে নির্ভর করতে চাই না। আমাদের দেশটাকে কোনো রাজনীতিবিদ বা ব্যবসায়ীর কাছে বর্গা দিইনি। আমরা জনগণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করবো, জনগণের জন্য রাজনীতি করবো।”
তিনি আরও বলেন, “যখন রাজনীতিবিদরা ব্যবসায়ীদের কাছে নিজেদের রাজনীতি বন্ধক দেয়, তখন তাদের মত করে পলিসি বানাতে হয়। তখন রাজনীতি আর জনগণের থাকে না।”
‘হাইব্রিড রাজনীতি’ ও তরুণদের জন্য বার্তা
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাসনাত বলেন, “আমাদের আগের নেতৃত্বের অনেকে দেশ থেকে টাকা পাচার করে বিদেশে আমোদ-ফুর্তি করেছে। তারা বড় বড় কথা বলেছে, কিন্তু নিজের ছেলেমেয়েদের বিদেশে পড়িয়েছে। অন্যদের সন্তান দিয়ে রাজনীতি করিয়েছে, কিন্তু নিজেদের সন্তানকে করেছে নেতার উত্তরসূরি।”
তিনি তরুণদের সতর্ক করে বলেন, “তরুণ ছাত্রদের হাইব্রিড নেতাদের থেকে দূরে থাকতে হবে। তোমাদের মধ্যে থেকেই আগামী নেতৃত্ব গড়ে উঠবে। যারা দেশের মাটি ও মানুষের ভাষা বোঝে, তারাই নেতৃত্বে আসবে।”
নেতৃত্ব নির্বাচন হবে যোগ্যতা দেখে
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “আমরা নেতা নির্বাচন করবো জনপ্রিয়তা, যোগ্যতা ও জনসংযোগ দেখে। কে জনগণের কাছে যায়, কে জনগণের ভাষা বোঝে, তাদেরকেই আমরা নেতৃত্বে আনবো। কোনো দলীয় ঠেলাঠেলি নয়, যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচনের সময় এসেছে।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “নির্বাচনের আগে কিছু নেতা ঢাকায় বসে বস্তায় বস্তায় টাকা এনে এলাকায় ঢুকে পড়ে। ভোটের আগের রাতে থানার ওসি-এসপি ও পোলিং এজেন্টদের কিনে নেয়। তারপর পাঁচ বছর জনগণকে দিয়ে গোলামি করায়।”
তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, “যে নেতা নির্বাচনের আগে টাকা দেয়, সে পরে আপনাকে কিনে নেয়। তাই জনগণকে সজাগ থাকতে হবে, বিবেক যেন কোনো দলের কাছে বন্ধক না দেই।”
‘সত্যকে ভয় না পাওয়া তরুণ প্রজন্মই গড়বে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ’
তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, “তরুণরা আজ সত্য বলতে ভয় পায় না। আমরা বিশ্বাস করি—হয় সাদা, নয় কালো। আমাদের আগের প্রজন্ম ভণ্ডামিকে বলেছে কৌশল, মিথ্যাকে বলেছে রাজনীতি, আর প্রতারণাকে বলেছে স্ট্র্যাটেজি। এই সংস্কৃতি আর চলবে না। তরুণদের হাতে নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে।”
‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ আসছে: নাহিদ ইসলাম
পথসভায় বক্তব্য রাখেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে এই মেহেরপুর থেকেই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়েছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ৫৪ বছর পরও সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন হয়নি। মুজিববাদী সংবিধানের মাধ্যমে মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে ধ্বংস করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ার সুযোগ এসেছে। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে এনসিপি কাজ করছে। আমরা চাই, জুলাই মাস থেকেই একটি নতুন 'জুলাই ঘোষণাপত্র' তৈরি হবে, যা আগামী বাংলাদেশের রূপরেখা নির্ধারণ করবে।”
কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপস্থিতি
এই পদযাত্রা ও পথসভায় এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন:
-
মুখ্য সমন্বয়কারী নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী
-
উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম
-
সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা
-
যুগ্ম সদস্যসচিব মাহিন সরকার
-
জেলা এনসিপির যুগ্ম সম্পাদক সাকিল আহম্মেদ প্রমুখ।
এর আগে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় মেহেরপুর শহীদ শামসুজ্জোহা পার্ক থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে সরকারি কলেজ মোড়ে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ হয়।