আর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) মাজহারুল ইসলামসহ বেশির ভাগ শীর্ষ পদে জয় পেয়েছে শিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’।
আজ শনিবার বিকেলে প্রায় ৫০ ঘণ্টা ধরে ভোট গ্রহণ ও গণনা শেষে এই ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান। তিনি জানান, ভিপি পদে আব্দুর রশিদ জিতু পেয়েছেন ৩ হাজার ৩২৪ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শিবির-সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের আরিফ উল্লাহ পেয়েছেন ২ হাজার ৩৭৯ ভোট।
জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন শিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের মাজহারুল ইসলাম, তিনি পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৩০ ভোট। এই পদে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ–সমর্থিত ঐক্য ফোরামের আবু তৌহিদ সিয়াম পেয়েছেন ১ হাজার ২৩৮ ভোট।
শিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে ২ হাজার ৩৫৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন ফেরদৌস আল হাসান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা বিজয়ী হয়েছেন। তিনি ভোট পেয়েছেন তিন হাজার ৪০২।
ভোট বর্জনকারী ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ সাদী হাসান পেয়েছেন ৬৪৮ ভোট এবং জিএস প্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী পেয়েছেন ৯৪১ ভোট।
৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ভোট পড়েছে ৬৮ শতাংশ।
এবারের জাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ হাজার ৮৯৭ জন। জাকসুর মোট ২৫টি পদের বিপরীতে ১৭৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া, ২১ টি হল সংসদে ১৫টি করে মোট ৩১৫টি পদের বিপরীতে প্রার্থী রয়েছেন ৪৪৩ জন।
নির্বাচন সামনে রেখে মোট আটটি প্যানেল ঘোষণা করা হয়। তবে এর বাইরেও অনেক প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
আট প্যানেলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্যানেলগুলো হলো— ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ সমর্থিত ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুর রশিদ জিতুর নেতৃত্বে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’, প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের প্যানেল ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ এবং ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’।
ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণ হলেও নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে—জামায়াত-সংশ্লিষ্ট কোম্পানি থেকে ব্যালট পেপার ও ওএমআর মেশিন সরবরাহ, অনুমতি থাকা সত্ত্বেও পোলিং এজেন্টদের প্রবেশে বাধা, ডোপ টেস্টের ফলাফল প্রকাশ না করা এবং নির্বাচন ‘ম্যানিপুলেট’ করার চেষ্টা।
ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগেই ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেল নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। পরে ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) ‘সম্প্রীতির ঐক্য’, ‘সংশপ্তক পর্ষদ’, ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ ও ছাত্র ফ্রন্টের আংশিক প্যানেলও একই পথে হাঁটে। কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
এ ছাড়া নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক। তারা হলেন, গণিত বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম ও অধ্যাপক শামিমা সুলতানা। শুক্রবার রাতে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার।
এদিকে ভোট গণনা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, মূল জটিলতা তৈরি হয় ভোট গণনার পদ্ধতি বদলানোর কারণে। অভিযোগ ওঠে, জামায়াত-সংশ্লিষ্ট কোম্পানি থেকে কেনা ওএমআর মেশিন ব্যবহার করা যাবে না। শেষ পর্যন্ত মেশিনের বদলে হাতে ব্যালট গোনার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এতে ভোট গণনায় ব্যাপক দেরি হয়।
বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে সিনেট ভবনে ভোট গণনা শুরু হয়। প্রায় ২৪ হাজার ব্যালট হাতে গুনতে গিয়ে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত শনিবার বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করা সম্ভব হয়।