জামালপুরে বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে সিংহভাগ লাইসেন্স নবায়ন নেই: স্বাস্থ্য সেবায় প্রতারিত হচ্ছে মানুষ

জামালপুর জেলা বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নানান অনিয়ম, অব্যস্হাপনা ও মালিক সমিতির বেঁধে দেওয়া অতিরিক্ত ডাক্তার ভিজিট ফি ও পরীক্ষা নিরিক্ষার নামে মাত্রাঅতিরিক্ত টেস্টের কারণে সাধারণ মানুষ চরম চিকিৎসা সেবা নিয়ে চরম দূর্ভোগে পড়েছে।  সেবা নিতে এসে প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

জানা গেছে, জামালপুর জেলায় দেড় শতাধিক বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে,তন্মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন রয়েছে মাত্র ৩৫টির মতো। বাকী প্রতিষ্ঠান চলছে অবৈধভাবে। জেলা স্বাস্হ্য বিভাগের সঠিক পরিসংখ্যান ও তদারকী না থাকায় এসব অবৈধ প্রাইভেট স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র গুলি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিধি নিষেধ ও শর্তাবলীর কোন তোয়াক্কা না করেই তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের শর্তমতে, বেসরকারী ক্লিনিক/হাসপাতাল ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের লাইসেন্সের কপি উক্ত প্রতিষ্ঠানের মূল প্রবেশ পথের সামনে দৃশ্যমান স্থানে অবশ্যই স্থায়ীভাবে প্রদর্শন করতে হবে। সকল বেসরকারী স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে উক্ত প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় তথ্যাদি সংরক্ষণ ও সরবরাহের জন্য একজন নির্ধারিত দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা/কর্মচারী থাকতে হবে এবং তার ছবি ও মোবাইল নম্বর দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করতে হবে। যে সকল প্রতিষ্ঠানের নাম ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতাল হিসেবে আছে, কিন্তু শুধু ডায়াগনষ্টিক অথবা হাসপাতালের লাইসেন্স রয়েছে, তারা লাইসেন্স প্রাপ্ত ব্যতিরেকে কোনেভাবেই নামের বাইরে কোনো ধরনের সেবা প্রদান করতে পারবে না। ডায়াগনষ্টিক সেন্টার/প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরীর ক্ষেত্রে যে ক্যাটারগরীতে লাইসেন্স প্রাপ্ত শুধুমাত্র সে ক্যাটারগীতে নির্ধারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ব্যতীত কোনভাবেই অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে না এবং ক্যাটারগরী অনুযায়ী প্যাথলজি/মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি ও রেডিওলজি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করতে হবে। বেসরকারী ক্লিনিক/হাসপাতালের ক্ষেত্রে লাইসেন্স এর প্রকারভেদ ও শয্যা সংখ্যা অনুযায়ী সকল শর্তাবলী বাধ্যতামূলকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। হাসপাতাল/ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে নিযোজিত সকল চিকিৎসকের পেশাগত ডিগ্রীর সনদসমূহ, বিএমডিসির হালনাগাদ নিবন্ধন ও নিয়োগপত্রের কপি অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে।হাসপাতাল/ক্লিনিক এর ক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের অপারেশন/সার্জারী/প্রসিডিউর এর জন্য অবশ্যই রেজিষ্ট্রার্ড চিকিৎসককে সার্জনের সহকারী হিসেবে রাখতে হবে। কোন অবস্থাতেই লাইসেন্স প্রাপ্ত/নিবন্ধিত হাসপাতাল ও ক্লিনিক ব্যতীত চেম্বারে অথবা ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে এ্যানেসথেশিয়া প্রদান করা যাবে না। বিএমডিসি স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ অবেদনবিদ ছাড়া যে কোনো ধরনের অপারেশন/সার্জারী/ইন্টারভেনশনাল প্রসিডিওর করা যাবে না।সকল বেসরকারী নিবন্ধিত/লাইসেন্স প্রাপ্ত হাসপাতাল/ক্লিনিকে লেবার রুম প্রটোকল অবশ্যই মেনে চলতে হবে। নিবন্ধিত/লাইসেন্স প্রাপ্ত হাসপাতাল/ক্লিনিকে অপারেশন থিয়েটারে অবশ্যই অপারেশন থিয়েটারের সকল নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, সিংহ ভাগ বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান শর্ত না মানাসহ জামালপুর জেলা বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নানান অনিয়ম, অব্যস্হাপনা ও মালিক সমিতির বেঁধে দেওয়া ডাক্তার ভিজিট ফি ও পরীক্ষা নিরিক্ষার নামে মাত্রাঅতিরিক্ত টেস্টের কারণে বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র গুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সেবা নিয়ে চরম দূর্ভোগে পড়েছেন। উন্নত সেবা পাওয়ার আশায় নিয়ে রোগী ও স্বজনরা বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গিয়ে অপচিকিৎসায় শীকার হচ্ছেন। হাসপাতালে অব্যবস্হাপনায় চরম হয়রানি ও অকালেই প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকেই।লাইসেন্স নবায়ন বা অনুমোদন বিহীন অনেক হাসাপাতালে ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে হাতুড়ী ডাক্তার দিয়ে চলছে সেবা কার্যক্রম। এদের নেই প্রাইভেট অনুমোদন শর্তাবলীর নিয়মিত ডাক্তার, নার্স, জরুরি বিভাগের সেবা, রোগ নির্ণয়ের মানসম্মত কোনো যন্ত্রপাতি বা ল্যাব টেকনোলোজিস্ট।এব্যাপারে জামালপুর সিভিল সার্জন ডা. ফজলুল হক জানান, প্রাইভেট হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলো নবায়নের জন্য হাসপাতালগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যথা সময়ে নবায়ন না করলে পরিদর্শন করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।