সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার অন্যতম পর্যটন স্পট ডিবিরহাওড় লালশাপলা বিল

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার অন্যতম পর্যটন স্পট ডিবিরহাওড় লালশাপলা বিল। ২০২৫ সালে ইউটিএমআইডিপি প্রকল্পের আওতায় জৈন্তাপুর উপজেলায় ২২শ মিটার রাস্তার পাকা করণের কাজ শুরু হয়। এর মধ্য পর্যটনের জন্য জনগুরুত্বপূর্ণ লালশাপলা বিল এলাকায় মোট ১ কিলোমিটার অংশজুড়ে জুড়ে রাস্তা পাকা করণের কাজ শুরু হয় চলতি ফেব্রুয়ারী মাসে। প্রকল্পটির ঠিকাদারি কাজ পায় নিয়ন এন্টার প্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। 

পর্যটনের অপার সম্ভাবনা ও পর্যটকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে প্রায় ৯০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ফেব্রুয়ারিতে রাস্তা পাকা করণের কাজ শুরু হলেও বিগত দুই মাসে প্রকল্পের কাজের ধীরগতির ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সাধারণ জনগণের চলচলের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

গত তিন মাস পূর্বে পর্যটন মৌসুম শেষ হয়ে গেলে রাস্তার কাজ শুরু হয়। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে রাস্তার কাজের জন্য পুরো এক কিলোমিটার অংশে বক্স খনন করা হয়েছে। এতেই ঘটে বিপত্তি।  

বক্স খনন করার পর প্রকল্প কাজে অগ্রগতি তুলনামুলজ ধীরগতির হওয়ায় উক্ত এলাকায় সাধারণ জনগণের চলাচলে তৈরি হয় ভোগান্তি। বিশেষ করে এপ্রিল মাসে কয়েকদফা ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে খননকরা বক্সের বেশ কিছু অংশে জমে যায় বৃষ্টির পানি। আর বাকি অংশ গুলোতে সৃষ্টি হয় কাঁদার।

বৃষ্টি হওয়ার পর প্রকল্প কাজে শুরু হয় আরো বেশী ধীরগতি। এক প্রকার প্রকল্পের কাজ কয়েক সপ্তাহজুড়ে প্রায় বন্ধ রাখার অভিযোগ করেন স্হানীয়রা। এতে করে অসমাপ্ত অবস্থায় কাজ ঝুলিয়ে রাখায় সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নেমে এসেছে চরম দূর্ভোগ।

ডিবিরহাওড় লালশাপলা বিলের প্রবেশমুখ সিলেট তামাবিল মহাসড়কের কদমখাল টার্ণিং পয়েন্টে এসে লাপলাবিলের রাস্তা শুরু। এই নান্দনিক শাপলাবিলটি ইতিমধ্যে সারাদেশের মানুষের নিকট ব্যপক জনপ্রিয় ও সমাদৃত। শাপলবিলের প্রবেশপথ থেকে মুল অংশ পর্যন্ত ১ নং নিজপাট ও ২ নং জৈন্তাপুর উভয় ইউনিয়নের ভূখন্ড রয়েছে। এই এক কিলোমিটার রাস্তা প্রতিদিন কদমখাল, উত্তর ডিবির হাওড়, কেন্দ্রী হাওড় ও ডিবির হাওড় এলাকায় প্রায় ৭০০-৮০০ মানুষ যাতায়াত ও তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনে ব্যবহার করে।

ঘিলারতৈল কদমখাল এলাকায় বাসিন্দা মো মজল আলি বলেন, তাকে লাঠি ভর করে নিয়মিত চলাচল করতে হয়। এজন্য শাপলাবিলের রাস্তা হতে অটোরিকশা দিয়ে জৈন্তাপুরে যাতায়াত করতেন। কিন্ত বর্তমানে গত কয়েকমাস ধরে শাপলাবিলের রাস্তায় কোন গাড়ী চলাচল না করায় তিনি বাড়ী থেকে বের হতে পারছেন না। 

ডিবিরহাওড় কদমখাল গ্রামের বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন বলেন, একটি মোটরসাইকেল এখন এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারে না। গাড়ী কিংবা ইজি বাইকতো দূরের কথা। এই এলাকায় পাশ্ববর্তী সকল গ্রামে কোন রোগী কিংবা প্রসূতি মায়েদের হাসপাতালে  যাতায়াতের বিকল্প কোন ব্যবস্হা নেই। তাছাড়া প্রতিদিন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় যাতায়াতরত  ছাত্রছাত্রীদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়। বাজারে গিয়ে চালের বস্তা বা গ্যাসের সিলিন্ডার এই এক কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে মাথায় ও ঘাড়ে বহন করে নিয়ে যেতে হচ্ছে।

স্হানীয় বাসিন্দা ও জৈন্তাপুর ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ড ভ্যান চালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান জামাল বলেন, তার বাড়ী মহাসড়কের নিকটে।প্রতিদিন এই এলাকার মানুষের যে দুর্ভোগ দেখা যাচ্ছে তা সত্যিই দুঃখজনক। তিনি বলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আরো দায়িত্বশীল হওয়া উচিৎ। সামনে বর্ষাকাল। এ সময় রাস্তায় হাঁটা কিংবা চলাচল আরো বেগতিক হয়ে উঠবে। মানুষের দূর্ভোগ যেভাবে কমে আসে সেই পদক্ষেপ নেয়ার জন্যে তিনি কর্তৃপক্ষের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মো আব্দুল আজিজ বলেন, বক্স খোড়ার পর রাস্তায় পানি জমে থাকায় কাজের কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। তিনি বলেন রাস্তার দুইপাশে দরকারি সব উপকরণ মজুদ রাখা আছে। তিনচারদিন কড়া রোদ উঠে গেলে পুনরায় কাজ শুরু করা হবে। এতে করে সর্বোচ্চ দুইদিনে রাস্তা চলাচলের উপযোগী হয়ে যাবে বলে তিনি জানান। 

এ বিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা স্হানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম রিয়াজ মাহমুদ বলেন উক্ত প্রকল্পে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তিনটি রাস্তার মধ্যে বাকি দুইটি রাস্তার ৬০% কাজ সম্পন্ন করেছে। লালশাপলা বিলের কাজে বক্স খোঁড়ার পরপরই ভারীবৃষ্টিতে পানি জমে যাওয়ায় প্রকল্প কাজে বিলম্ব হয়েছে। তিনি আরো বলেন সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের চলমান দূর্ভোগের বিষয়ে মাথায় রেখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা আবহাওয়া উন্নত হলে দ্রুত কাজ শুরু করবে। তাছাড়া প্রকল্পটি আগামী ৩০শে জুনের মধ্যে শেষ করার কথা। এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে তাগাদা দেয়া হয়েছে।