ভারতেপাচারকারী চক্রের হয়রানীমূলক একাধিক মামলার শিকার হয়েছেন পাচার ফেরত দুই নারী। এমনটি অভিযোগ করেছেন পাচারের শিকার ঐ দুই নারী।


নারীপাচার মামলা প্রত্যাহারের চাপসৃষ্টির অপকৌশল হিসেবে পাচারকারীচক্র ভারতে পাচারের শিকার ওই দুই নারীসহ তাদের পরিবারের লোকজনকে জড়িয়ে একের পর এক হয়রানীমূলক ৪টি পৃথক মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
 সম্প্রতি ভুক্তভোগী ওই দুই নারীসহ তাদের পরিবারের লোকজন ঝিকরগাছা প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের সামনে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন। এরা হলেন, ঝিকরগাছা পৌর শহরের সরকারি ডাকবাংলোর পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা শাহিন মোড়লের স্ত্রী চার সন্তানের জননী জাহানারা বেগম (৪০) ও একই এলাকার রবিউল ইসলাম এর স্ত্রী পলি খাতুন (২৫) পাচারের শিকার ওই দুই নারী প্রতিবেশী দেশ ভারতের মহারাষ্ট্রের পুনে শহরের নিকটবর্তী ছাংলি বকুলনগর নিষিদ্ধ পল্লীতে তিনমাস আটকে থাকা অবস্থায় সেখানে ঘটে যাওয়া বিভীষিকাময় নরকযন্ত্রণার বর্ণনা তুলে ধরেন। তাদের দেয়া সেই নরকযন্ত্রণার লোমহর্ষক বিবরণ-বর্ণনা এখানে তুলে ধরা সম্ভব নয়। 
 পাচার হওয়া ২ নারী জানিয়েছেন, একটি পাচারকারীচক্র ভালো বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের বৈধ পথে বিদেশে নেয়ার কথা বলে পাসপোর্ট তৈরি করে। পরে তাদের নানা ছলচাতুরি ও প্রলোভন দেখিয়ে তাদেরকে ভারতে পাচার করে। পাচারের পর সীমান্ত পেরিয়ে তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নেয়া হয়। শার্শার বেনাপোল সীমান্ত পার হওয়ার পর তাদেরকে বিক্রি করে তুলে দেওয়া হয় দালালদের হাতে ।

এরপর তাদের ট্রেনযোগে নেয়া হয় ভারতের মহারাষ্ট্রের মুম্বাই ও পুনে শহরের নিকটবর্তী একটি যৌনপল্লীতে। সেখানে আটকে রেখে টানা তিনমাস তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চলে অমানবিক ও নিষ্ঠুর যৌন নির্যাতন-নিপীড়ন। 

এদিকে পাচারের শিকার দুই নারী রহস্যজনক নিখোঁজ হওয়ায় তাদের মা বাবা, স্বামী-সন্তানরা চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাতে থাকে। খোঁজ না পাওয়ায় ঝিকরগাছা থানায় একটি নিখোঁজ সাধারণ ডায়েরি করেন। 

একপর্যায়ে তারা জানতে পারেন একটি বিশেষ পাচার চক্রের মাধ্যমে তারা ভারতে পাচারের শিকার হয়েছে। এরই একপর্যায়ে পাচারকারীচক্রের আত্মীয়-স্বজনের উপর পাচারের শিকার আত্মীয়-স্বজন চাপসৃষ্টির পর তারা ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের মুম্বাইয়ে পাচারের কথা স্বীকার করে। 

অপরদিকে অবৈধ যৌনপল্লীতে বাংলাদেশী নারী পাচার সংক্রান্ত একটি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভারতের মহারাষ্ট্রের পুনে শহরের হাদাবসার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'রেসকিউ ফাউন্ডেশন'র হস্তক্ষেপে সেখানকার পুলিশ পাচারের শিকার ঝিকরগাছার ঐ ২ নারীসহ ৩ জনকে উদ্ধার করে। এরা সবাই বাংলাদেশি।সেখানকার পুলিশ পাচার হওয়া বাংলাদেশী নারীদের নিষিদ্ধ যৌনপল্লী থেকে উদ্ধার ও তাদের কাছ থেকে ভারতীয় ভুয়া নাগরিকত্ব ও আধার কার্ড (রেশন কার্ড) উদ্ধার করে।
জানাযায়, গত ২৬/০৯/২০২৪ তারিখে এ রেসকিউ সংগঠনটি ভারতের মুম্বাইয়ের বাংলাদেশ হাইকমিশননের ডেপুটি হাইকমিশনার চিরঞ্জিব সরকার'র সহযোগিতায় তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি গ্রহণ করে।পরে তাদের ভারতের উত্তর ২৪পরগনা বনগাঁও হরিদাসপুর সীমান্তের ইমিগ্রেশন দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। জানাযায়,গত ০৩/১০/২০২৪ তারিখে মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোর'র পক্ষ থেকে পাচারফেরত স্বদেশ প্রত্যাবাসনকৃত এসব নারীদের নিজেদের জিম্মায় গ্রহণ করত: তাদের পরিবারের 'পুন:একত্রিকরণ' বিষয়ে বেনাপোল পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়।
সংগঠনটি তাদের আইনি সহায়তাসহ তাদের পরিবারের কাছে পুনঃএকত্রীকরণে যাবতীয় সহযোগিতা অব্যাহত রাখে।
পাচার হওয়া ও স্বদেশ প্রত্যাবাসনকৃত ভিকটিম ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঝিকরগাছা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। ঝিকরগাছা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম সভার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভূপালি সরকার, থানা অফিসার ইনচার্জের প্রতিনিধি ওসি (তদন্ত) আবু সাঈদ ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা অনিতা মল্লিকের দৃষ্টি আকর্ষণকরে
পাচারকারীচক্রের একাধিক হয়রানীমূলক মামলা সম্পর্কে অবহিত করেন'। এরই প্রেক্ষিতে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে।