ঢাকা কলেজের সামনে অবৈধ ভ্রাম্যমাণ দোকান উচ্ছেদের মাধ্যমে ফুটপাত দখলমুক্ত করেছেন একদল শিক্ষার্থী। কলেজের শিক্ষার পরিবেশ রক্ষার্থে ও পথচারীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে এ অভিযান পরিচালনা করেন তারা। শনিবার (১২ এপ্রিল) বেলা ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ফুটপাত দখলমুক্তের এ অভিযান চালান শিক্ষার্থীরা। দখলমুক্ত রাখতে কলেজের পুরো ফুটপাত সংলগ্ন ল্যাম্প পোস্টের স্তম্ভে দড়ি দিয়ে বেঁধে দিয়েছেন তারা। দড়িতে ‘ক্যাম্পাস এলাকায় ফুটপাতে দোকান বসানো সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ’ লেখা সংবলিত লিফলেট ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, বিগত সব রেকর্ড ভেঙে গত রমজান জুড়ে ঢাকা কলেজের দেয়াল ও ফুটপাতে বেঞ্চ, আংটা ও ভ্যানগাড়ির মাধ্যমে যত্রতত্র দোকান বসায় হকারেরা। এ কাজে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও উঠে। কলেজের সামনের ফুটপাত ও রাস্তায় অবৈধ দোকান বসানোর ফলে তীব্র ভোগান্তিতে পড়তেন শিক্ষার্থী ও পথচারীরা।
ফুটপাত দখলমুক্ত করার এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন শিক্ষার্থী ও পথচারীরা। তবে প্রশাসন কর্তৃক ফুটপাতে অবৈধ দোকান উৎখাত করা হলেও আবারো দোকান বসায় হকারেরা। তাই এবারেও স্থায়ীভাবে ফুটপাত দখলমুক্ত রাখার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী সামিউল হাসান বলেন, ‘দেখেন একটা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য হলো এর মেইন গেট ও সামনের অংশ। ঢাকা কলেজের মেইন গেটের সামনে ও এর আশেপাশে দীর্ঘদিন ধরে ফুটপাত ব্যবসায়ীদের দখলে ছিল। যা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য নষ্ট করছিল। এর সাথে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের ও সাধারণ মানুষের যাতায়াতের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছিলো।’
কলেজের সামনের ফুটপাত দখলমুক্ত করতে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ফুটপাত দখলমুক্তের জন্য প্রতিবাদ করে আসলেও কলেজ প্রশাসন এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেনি। দীর্ঘদিনের ক্ষোভ থেকেই সম্প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের সামনের ফুটপাত দখলমুক্ত করেছে; যা কলেজ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা সহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে স্বস্তি এনেছে।’
ফুটপাত দখলমুক্ত করতে অন্যতম অভিযান পরিচালনাকারী ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য পারভেজ মোশাররফ বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে কাজ করছিলাম। সবার সহযোগিতায় ফুটপাত স্থায়ীভাবে দখলমুক্ত রাখার কাজটি বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করছি। আমরা প্রত্যাশা করি, ফুটপাত দখলমুক্ত করতে প্রশাসন দ্রুত একটি সমাধান দিবেন। আমরা চাইনা ক্যাম্পাসের মধ্যে আবার ফুটপাত ফিরে আসুক।’
তিনি আরও বলেন, ‘অপরাপর সব সংগঠন সহ সকল শিক্ষার্থীরা যেন এ বিষয়ে সজাগ থাকে এই আহ্বান জানাই। কোন ব্যক্তি বা যেকোনো সংগঠনের নামে যদি ফুটপাত দখলের মাধ্যমে ব্যবহার করে তাহলে আমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবো। ক্যাম্পাস প্রশাসনের মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনকে বলা হয়েছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন উচ্ছেদে ব্যর্থ হয়েছে। কলেজ প্রশাসন সহ সকল পক্ষকে অবহিত করে আজকের এই উচ্ছেদ করা হয়েছে। ফুটপাত দখলমুক্ত করতে স্থায়ী সমাধানের জন্য আলোচনার মাধ্যমে স্মারকলিপির দেওয়ার দরকার হলে আমরা দিবো।’
ফুটপাত দখলের বিভিন্ন সমস্যার কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ফুটপাত দখলের কারণে ক্যাম্পাসের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা হকারদের জন্য বসতে পারে না। তারা অনেক চিল্লাচিল্লি করে পরিবেশ নষ্ট করে। ক্যাম্পাসের আশেপাশে ব্যবসায়ীরা ফুটপাত দখল করে নানা সমস্যা সৃষ্টি করে। আপাতদৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে এটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না; ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।’