কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক অবৈধভাবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ভূমি দখল করে দোকান বরাদ্ধ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের তাড়াইল-নান্দাইল মূল সড়কের পাশে উপজেলা পরিষদ ভবন সংলগ্ন ৭০ফুট প্রস্থ্য সড়কের ৩০ফুট অবৈধভাবে দখল করে একতলা ছাদবিশিষ্ট সামনে শাটার দিয়ে ১০টি দোকান নির্মান করে নিজের একক প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মধ্যে বরাদ্ধ প্রদান করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন। এ নিয়ে এলাকার সাধারণ জনগনের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভ ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা পরিষদ গেইট সংলগ্ন সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ভূমি দখল করে ১০টি দোকান নির্মান করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন। দোকান ঘর নির্মানের সময় পুরো কাজটির দেখভাল করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আস্থাভাজন নাজির তাজুল ইসলাম।বিতর্কিত ভূমিতে এলাকার মৌসুমী খুদ্র ব্যাবসায়ীরা অস্থায়ীভাবে ব্যাবসা পরিচালনা করে জিবীকা নির্বাহ করতো।
উপজেলার প্রভাবশালী কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানের লোলপদৃষ্টি এবং নির্বাহী কর্মকর্তার পকেট ভারী করার জন্য তরিঘরি করে কোনও টেন্ডার ছাড়াই সওজ এর অনুমোতি ব্যাতিরেকে জনপ্রতি ২লক্ষ টাকা করে ৯জনের কাছ থেকে ১৮লক্ষ টাকা অগ্রিম নিয়ে দোকান বরাদ্ধ দেন বলে অভিযোগ করেন পূর্বের ব্যাবসায়ীরা। তাছাড়া সড়ক সরু হওয়ার দরুন যানজট লেগেই আছে।এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুনের নিকট জানতে চাইলে ৯জনের নিকট থেকে ১৮লক্ষ টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের ইমামের বেতন এবং মসজিদ উন্নয়নের কাজের জন্য দোকানঘর নির্মান করা হয়েছে।সড়ক ও জনপথ বিভাগের ভূমিতে কিভাবে দোকান নির্মান করলেন এবং অনুমতি আছে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিতর্কিত ভূমি সড়ক ও জনপথের এটা আমার জানা ছিলোনা।
বিগত ৫ আগষ্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন নিজের অনৈতিক কাজের জন্য তাড়াইল থেকে বদলী হয়ে ফরিদপুরের সদরপুর চলে যান। যাওয়ার আগে তড়িঘরি করে বরাদ্ধের কোনও কাগজ কাউকে না দিয়েই মৌখিকভাবে দোকান বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় নেন তাড়াইল থেকে।ইউএনও অফিসের নাজির তাইজুল ইসলামের নিকট এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুনের হুকুমে আমি দোকানঘরগুলির তৈরি থেকে হস্থান্তর পর্যন্ত দেখভাল করি। কোনও টেন্ডার ছাড়াই ৯জনের নিকট থেকে ২লক্ষ টাকা করে মোট ১৮লক্ষ টাকা নিয়ে দোকান নির্মান করেছেন অথচ কোনও দোকানীকেই টাকার রশিদ দেননি কেন, এরকম প্রশ্নে তাইজুল জানান আমি এতসব জানিনা। স্যার আমাকে হুকুম দিছে আমি তা পালন করছি।
কয়েকজন ব্যাবসায়ী জানান, আমরা নগদ ২লক্ষ করে নগদ টাকা দিয়েছি নাজির তাইজুলের কাছে। বিনিময়ে আমাদের কোনও রসিদ দেয়া হয়নি। তারা আক্ষেপ করে বলেন, আওয়ামীলীগের একজন এবং জাতীয় পার্টির একজন বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান বেনামে ২টি করে ৪টি দোকান নিয়ে মোটা অঙ্কের টাকায় অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছেন।এ ব্যাপারে উপজেলার জাওয়ার ইউনিয়নের ছনাটি গ্রামের মো. নজরুল ইসলাম বিগত ২২আগষ্ট কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নিকট অবৈধদোকান উচ্ছেদের জন্য লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন।
একই তারিখে মো. নজরুল ইসলাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের ময়মনসিংহ জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও সড়ক ভবন তেজগাঁও ঢাকার প্রধান প্রকৌশলি বরাবর আরো দুটি অভিযোগ প্রদান করেন। নজরুল ইসলামের দরখাস্তের প্রেক্ষিতে জেলা সওজ বিভাগের একজন সার্ভেয়ার ও একজন সাব-এসিটেন্ট ইনঞ্জিনিয়ার ইতিমধ্যে সরেজমিনে পর্যবেক্ষন ও মাপজোক করে গেছেন।দোকানঘর ছাড়াও আরও ৮ফুট ভিতরে সওজ এর ভূমি আছে বলে জানান সার্ভেয়ার।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেষ বড়ুয়া'র সাথে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ প্রাপ্তি কথা স্বীকার করে জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন আমাদের অনুমতি না নিয়েই সড়ক ও জনপথ বিভাগের মূল সড়ক দখল করে দোকান নির্মান করে ভাড়া প্রদান করেছেন। এর ফলে ৭০ফুটের প্রশস্থ্য সড়ক কমে ৪০ফুটে দাড়িয়েছে। এজন্য উপজেলা পরিষদের সামনে অর্থাৎ তাড়াইল সদর বাজারে প্রবেশ দ্বারক্ষ্যত জায়গাটিতে যানজট লেগেই আছে। তিনি আরও জানান, তাছাড়া উপজেলার ধলা গ্রামের বাসিন্দা দৈনিক সবুজ পত্রিকার সাংবাদিক আলী হায়দারের নিকট থেকেও বিতর্কিত জায়গায় দোকান বরাদ্ধের একটি অভিযোগ পেয়েছি।
রিতেষ বড়ুয়া আরও বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে এবং সত্যতা থাকায় বিতর্কিত সওজ এর জায়গায় নির্মিত দোকান উচ্ছেদের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়ার অনুরোধ করে বিগত ১লা সেপ্টেম্বর'২০২৪ কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে ৩৫.০১.৪৮৪৯.৭৮২.৫০.০০১.২১-১৩৮৫ নং স্মারকে একটি চিঠি দিয়েছি। আশা করি দ্রুত কার্যকর ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।