জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ও অভিনেতা তাহসান সম্প্রতি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। তবে এই বিবাহকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্য, কারণ তাহসানের স্ত্রী রোজা আহমেদ বরিশালের কুখ্যাত সন্ত্রাসী পানামা ফারুকের কন্যা।

জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ও অভিনেতা তাহসান সম্প্রতি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। তবে এই বিবাহকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্য, কারণ তাহসানের স্ত্রী রোজা আহমেদ বরিশালের কুখ্যাত সন্ত্রাসী পানামা ফারুকের কন্যা। পানামা ফারুক, যার প্রকৃত নাম ফারুক আহমেদ, ১৯৯০-এর দশকে বরিশালের অন্যতম আতঙ্কের নাম ছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পানামা ফারুক বরিশালের পৌর এলাকায় দখলদারি শুরু করেন। তিনি নিজেকে যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন এবং বিরোধী দল, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষকে টর্চার সেলে আটকে নির্মম অত্যাচার করতেন। স্থানীয়ভাবে গঠিত তার পানামা বাহিনী ছিল বরিশালের বাজার রোড এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব চালানোর প্রধান হাতিয়ার। ফারুকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘পানামা ট্রেডার্স’ তার মেয়ের নামে প্রতিষ্ঠিত হলেও সেটি ছিল সন্ত্রাসী কার্যকলাপের আড়াল। সাংবাদিকেরা তার অপকর্মের খবর প্রকাশ করলে বরিশাল প্রেস ক্লাবে হামলার ঘটনাও ঘটে। এছাড়া, ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে কাউনিয়া এলাকায় রাহাত ও পুলিশ কর্মকর্তা কামাল হত্যাকাণ্ডে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর ফারুক বিদেশে পালিয়ে যান। পরে ২০০৯ সালে দেশে ফিরে আদালতে আত্মসমর্পণ করলেও তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি ঘটেনি। অবশেষে ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি র‍্যাবের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে তিনি নিহত হন। রোজা আহমেদ, যিনি এখন তাহসানের স্ত্রী, পানামা ফারুকের মেয়ে হলেও তার জীবন একেবারে ভিন্ন পথে এগিয়েছে। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে কসমেটোলজিতে স্নাতক সম্পন্ন করার পর রোজা তার নিজস্ব ব্রাইডাল মেকআপ প্রতিষ্ঠান ‘রোজারস ব্রাইডাল মেকওয়ার’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি একজন সফল ব্রাইডাল মেকআপ আর্টিস্ট এবং উদ্যোক্তা হিসেবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে খ্যাতি অর্জন করেছেন। পানামা ফারুকের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সময় রোজা ছিলেন মাত্র দশম শ্রেণির ছাত্রী। বাবার অন্ধকার অতীত থেকে দূরে থেকে তিনি নিজের কর্মের মাধ্যমে পরিচিতি গড়ে তুলেছেন। নারীদের ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখতে তিনি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রকল্প শুরু করেছেন, যেখানে নতুন নারী উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বাড়াতে সহযোগিতা করা হয়। রোজার উদ্যোগ এবং কর্মশক্তি তাকে আধুনিক ফ্যাশন জগতের একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বাবার ছায়া থেকে বেরিয়ে নিজের আলাদা পরিচিতি তৈরি করতে পেরেছেন তিনি। তার পরিশ্রম এবং সংকল্প তরুণ প্রজন্ম, বিশেষত নারীদের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাহসান ও রোজার এই বিবাহ তাদের ব্যক্তিগত জীবনের আনন্দ হলেও, রোজার পিতার অতীতের কারণে এটি এক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তবে রোজার নিজস্ব পরিচিতি এবং অর্জন এই আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে, যা প্রমাণ করে যে একজন ব্যক্তি নিজের পরিশ্রম ও ইচ্ছাশক্তি দিয়ে পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে সম্পূর্ণ আলাদা পরিচিতি গড়ে তুলতে পারেন। রোজার এই পথচলা সমাজের জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করে এবং নারীদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে।