জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রশাসনিক ভবনে লিফট স্থাপনের কাজ চলছে, যার ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা। এই খরচ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে পূর্ববর্তী প্রশাসনের সময় বরাদ্দ করা হয়। তবে এই উদ্যোগ ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. রেজাউল করিম জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের জন্য টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল আগের প্রশাসনের আমলে এবং এটি বর্তমান অর্থবছরের বাজেটের অংশ। তিনি বলেন, “টাকা যদি নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় না করা হয়, তাহলে তা ফেরত যাবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে লিফট স্থাপনের পক্ষে ছিলাম না। কিন্তু বরাদ্দকৃত অর্থ অন্য খাতে ব্যয় করার অনুমতি নেই।”
ড. করিম আরও যুক্তি দেন, “প্রশাসনিক ভবনে যখন বাইরের অতিথি বা মেহমান আসে, তখন তাদের দোতলায় উঠতে লিফট সহায়ক হবে।”
তবে এই যুক্তি মানতে নারাজ শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মুরসালিন জয় বলেন, “যেখানে আমাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থী ৭-৮ তলা ভাড়া বাসায় বাস করে, সেখানে দুই তলা ভবনের জন্য লিফট নির্মাণ নিছক বিলাসিতা ছাড়া কিছুই নয়।” তিনি প্রশাসনের এমন ‘শিক্ষার্থীবান্ধব না হওয়া’র নিন্দা জানান।
বিশ্লেষকদের মতে, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের সংকট, গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাব, ও হোস্টেল সংকট শিক্ষার্থীদের নিত্যদিনের সমস্যা, তখন দুই তলা ভবনে লিফট বসানো অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়।
লিফট স্থাপনের পেছনে প্রশাসনের যুক্তি থাকলেও, শিক্ষার্থীদের চোখে এটি একটি অগ্রাধিকারহীন খাতে অপ্রয়োজনীয় খরচ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমিত বাজেটে এমন ব্যয় ভবিষ্যতে শিক্ষার্থী-প্রশাসন সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব বাড়াতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাজেটের সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং অগ্রাধিকার নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জবির শিক্ষার্থীদের মৌলিক চাহিদা পূরণ না করে প্রশাসনিক ভবনে বিলাসিতার মতো প্রকল্পে অর্থ ব্যয় করাটা নীতিগত ও নৈতিক প্রশ্ন তোলে। বরাদ্দ থাকলেই যে খরচ করতেই হবে—এই মানসিকতা পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে।