ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। ইতিহাসের পাতায় এমন অনেক নাম আছে যারা একদিন দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় ছিলেন, তবে জীবন বাঁচাতে তাদের পালাতে হয়েছিল।

কখনো গণআন্দোলন, কখনো অভ্যুত্থান কিংবা কখনো আন্তর্জাতিক চাপের কারণে রাষ্ট্রপ্রধানরা একসময় দেশ ছেড়ে চলে গেছেন নির্বাসনে। পালানোর পর অনেকেই আর দেশে ফিরেননি। হয়তো কেউ ফিরেছেন অনেক বছর পর।

নিচে এমনই কিছু রাষ্ট্রপ্রধানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো—


ইদি আমিন (উগান্ডা)

১৯৭০-এর দশকে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য কুখ্যাত ছিলেন উগান্ডার স্বৈরশাসক ইদি আমিন। ১৯৭৯ সালে জনরোষে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান তিনি। এর আগে লিবিয়া ও ইরাকেও অবস্থান করেছিলেন তিনি। সৌদিতে লোহিত সাগরের পাশে প্রায় দুই দশক বিলাসবহুল জীবন কাটান। এরপর ২০০৩ সালে রিয়াদের এক হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।


মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভি (ইরান)    

১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন শাহ পাহলভি। তিনি মিশর, মরক্কো, বাহামা, মেক্সিকো, আমেরিকা হয়ে আবার মিশরে ফিরে যান এবং ১৯৮০ সালে কায়রোতে তার মৃত্যু হয়।


ফার্দিনান্ড মার্কোস (ফিলিপিন্স)    

১৯৮৬ সালে জনবিক্ষোভ ও বিরোধীদের চাপে মার্কোসকে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় তিনি গুয়াম দ্বীপে যান। এরপর হাওয়াইয়ে আশ্রয় নেন। ১৯৮৯ সালে সেখানেই মারা যান।


ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ (ইউক্রেন)    


গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হওয়ার পরও ইউক্রেনে ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ পরিচিত ছিলেন রাশিয়াপন্থি হিসেবে। ২০১৪ সালে তার নীতির বিরোধিতায় ইউক্রেনে কঠোর আন্দোলন শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা রাজধানী কিয়েভ দখল করে নিলে পার্লামেন্ট তাকে বরখাস্ত করে। এরপর তিনি পালিয়ে রাশিয়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। এরপর থেকে সেখানেই অবস্থান করছেন।


বেন আলী (তিউনিসিয়া)    


২৩ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা বেন আলীকে আরব বসন্তের উত্তাপে ২০১১ সালে তিউনিসিয়া ছাড়তে হয়। তিনি সৌদি আরবে পালিয়ে যান। সেখানে তার সম্পর্কে খুব কম তথ্য পাওয়া গেছে। পরে ২০১৯ সালে জেদ্দার এক হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।


আশরাফ ঘানি (আফগানিস্তান)    


তালেবানরা রাজধানী কাবুলের দিকে এগিয়ে আসার সময় ২০২১ সালে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি পালিয়ে যান। পরে জানা যায় তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে আশ্রয় নিয়েছেন। নিজ দেশের রক্তপাত এড়াতে দেশ ছেড়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।


নওয়াজ শরিফ (পাকিস্তান)    


১৯৯৯ সালে সেনাপ্রধান মুশাররফের সঙ্গে দ্বন্দ্বে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী থাকা নওয়াজ শরীফ। এরপর তিনি সৌদি আরবে নির্বাসনে যান। পরে দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৯ সালে লন্ডনে যান। পরে ২০২৩ সালে দেশে ফিরে আসেন তিনি।


পারভেজ মোশাররফ (পাকিস্তান)    


২০০৮ সালে নির্বাচন হেরে দেশ ছাড়েন নওয়াজ শরিফকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলকারী মোশাররফ। ২০১৩ সালে দেশে ফিরলে গ্রেপ্তার হন। পরে ২০১৬ সালে চিকিৎসার অজুহাতে দুবাই যান। এরপর ২০২৩ সালে সেখানেই মোশাররফের মৃত্যু হয়।


থাকসিন শিনাওয়াত (থাইল্যান্ড)    


২০০৬ সালে সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন থাকসিন। বিদেশে থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে, পরে লন্ডনে চলে যান এবং সেখানে ১৫ বছর নির্বাসনে ছিলেন। ২০২৩ সালে তিনি দেশে ফেরেন।


চার্লস টেলর (লাইবেরিয়া)    


২০০৩ সালে চার্লস টেলর গৃহযুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে দেশ ছাড়েন। পরে যুদ্ধাপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাকে ৫০ বছরের সাজা দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক আদালতে তার বিচার করা হয়।


গোটাবায়া রাজাপাকশা (শ্রীলঙ্কা)    


শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংকটে সৃষ্ট গণআন্দোলনে ২০২২ সালে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান রাজাপাকশা। প্রথমে সিঙ্গাপুর, পরে থাইল্যান্ডে আশ্রয় নেন তিনি। দুই মাস পর দেশে ফিরে আসেন তিনি।


শেখ হাসিনা (বাংলাদেশ)    


কোটা আন্দোলন কেন্দ্র করে সারাদেশে তীব্র গণবিক্ষোভ শুরু হয় ২০২৪ সালে। পরে তা গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ওই বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা তোপের মুখে দেশ ছেড়ে ভারত পালিয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার পালানোর মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘদিনের শাসনের অবসান ঘটে। এরপর গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।