নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা যেন চোর-ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা। মে মাসজুড়ে একের পর এক চুরি ও ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছে সাধারণ মানুষ। শুধু গবাদিপশু চুরির ঘটনাই নয়, সন্ধ্যার পর রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনাও বাড়ছে। এতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন উপজেলার মানুষ।
গত দুই রাতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে চুরি হয়েছে কোরবানির গরুসহ ১৩টি গরু-ছাগল। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাঠ পর্যায়ে পুলিশের তৎপরতা না থাকায় অপরাধীরা নির্বিঘ্নে এসব ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। তবে রাণীনগর থানার ওসি আব্দুল হাফিজ মো: রায়হান জানান, জনবল সংকটের মধ্যেও পুলিশ তৎপর রয়েছে।
৩ মে রাতোয়াল গ্রামের মজিবুর রহমান ও দুলাল হোসেনের গোয়ালঘর থেকে চুরি হয় চারটি গরু যার বাজারমূল্য প্রায় দুই লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। ৭ মে জলকৈ গ্রাম থেকে একটি গরু চুরি হয়। এভাবে মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই চুরি হয় সাতটি গরু।
২৯ মে মাঝগ্রামের আজিজুল হকের বাড়িতে কোরবানির জন্য কেনা দুটি গরু ও সাতটি ছাগল চুরি হয়। পরদিন ৩০ মে রঞ্জনিয়া পাকারমাথা এলাকার কৃষক ডবলু প্রামানিকের বাড়িতে হানা দেয় চোরেরা। সেখান থেকে চুরি হয় আরও দুটি গরু ও দুটি ছাগল, যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা।
ডবলু প্রামানিক বলেন, “ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখি দরজার বাইরে শিকল লাগানো। স্থানীয়দের ডেকে খুলে দেখি বাড়ির প্রাচীরের ইট খুলে ভিতরে ঢুকে চোরেরা মেইন গেট আর গোয়ালঘরের তালা ভেঙে সব গরু-ছাগল নিয়ে গেছে।”
মাঝগ্রামের আজিজুল হকের ছেলে মেহেদী হাসান বলেন, “কোরবানির গরু কিনে গোয়ালঘরে রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সকালে উঠে দেখি গরু, ছাগল—সব চুরি হয়ে গেছে। রাস্তায়ও ব্যারিকেড দিয়ে ছিনতাই হচ্ছে। কোথাও কোনো নিরাপত্তা নেই।”
চিত্রটি নতুন নয়। ৩০ এপ্রিল গুয়াতা গ্রামে আবু বক্কর সিদ্দিক তালুকদারের বাড়ি থেকে এক লক্ষ ৮০ হাজার টাকার দুটি গরু চুরি হয়। আর গত বছরের ১৫ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ১০ মার্চ পর্যন্ত চুরি গেছে প্রায় ৩৫টি গরু। অভিযোগ করেও একটিরও হদিস মেলেনি।
পুলিশের দাবি, তারা তৎপর রয়েছে। রানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল হাফিজ মো: রায়হান বলেন, “জনবল সংকট রয়েছে। একজন পুলিশ সদস্য দিনে তিনবার ডিউটি করছেন। অনেক এলাকায় মানুষ গরু রাখে এক জায়গায়, আর ঘুমায় আরেক জায়গায়। চোরেরা সে সুযোগ নেয়। প্রতিটি ঘরে তো পুলিশ রাখা সম্ভব নয়। তবে ছিনতাই ঠেকাতে টহল বাড়ানো হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতিটি ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে। আগামীতে অভিযান জোরদার করা হবে।”
তবে সচেতন মহলের প্রশ্ন—থানায় অভিযোগ দিয়েও যখন কোনো কার্যকর ফল মিলছে না, তখন সাধারণ মানুষ নিরাপত্তা পাবে কোথায়? এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে কোরবানির ঈদের আগে চুরি-ছিনতাই আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।