এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে বাংলাদেশে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে এই সময়সীমা নির্ভর করবে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য এবং সংশ্লিষ্ট সংস্কারের অগ্রগতির ওপর। তিনি বলেছেন, "যদি নির্বাচন প্রক্রিয়া ও সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য সময় যুক্ত করা হয়, তবে অন্তত ছয় মাস বাড়তি সময় লাগবে। সে ক্ষেত্রে ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে নির্বাচন করা সম্ভব।" ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ গঠনের ঘোষণা নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে সরকার যে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, তাদের কাজের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে ইউনূস বলেন, এসব কমিশনের চেয়ারম্যানদের নিয়ে একটি ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। তিনি বলেন, “এই কমিশন রাজনৈতিক দলসহ সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমঝোতার ভিত্তিতে প্রস্তাবনা তৈরি করবে এবং সেগুলো বাস্তবায়নে কাজ করবে।” আগামী জানুয়ারির মধ্যেই এই কমিশন কাজ শুরু করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ইউনূস। তিনি আরও জানান, জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার গুরুদায়িত্ব পালন করবেন তিনি নিজেই, এবং তার সহকারী হিসেবে থাকবেন অধ্যাপক আলী রিয়াজ। বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণ। বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইউনূস মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণ করেন এবং দেশের মানুষের আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “স্বাধীনতার লক্ষ্য পূরণে আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। তবে গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শাসনের পতন দেশকে নতুন সম্ভাবনার দিকে নিয়ে গেছে।”গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান, এবং তার সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এরপর ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়। ভোটার তালিকা হালনাগাদে জোর নতুন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর সবচেয়ে বড় কাজ হবে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা। ইউনূস বলেন, “গত তিনটি নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়নি। নতুন ও যোগ্য সব ভোটারদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।”তিনি আরও বলেন, “এই নির্বাচনে প্রথমবারের মতো তরুণ ভোটাররা অংশগ্রহণ করবে। এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হয়ে থাকবে। তাই ভোটারদের অভিজ্ঞতা মসৃণ করতে সব প্রস্তুতি নিতে হবে।” নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টিও এই সরকারের লক্ষ্য বলে তিনি উল্লেখ করেন। সংস্কারের ওপর নির্ভর করছে সময়
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়ে ইউনূস বলেন, “সবার সহযোগিতায় এমন একটি নির্বাচন ব্যবস্থা তৈরি করতে চাই, যা ভবিষ্যতের সংকট মোকাবিলায় কার্যকর হবে।”তিনি দেশবাসীকে ঐক্য ধরে রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আত্মবিশ্বাস রাখুন। জাতির লক্ষ্যকে নিজের লক্ষ্য হিসেবে ধারণ করুন। কোনো শক্তি আমাদের এই পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না।” নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ জানাতে আরও সময় প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সংস্কার যত গভীর হবে, তত সময় লাগবে। তবে আমাদের উদ্দেশ্য একটি টেকসই এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন।”