পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গলাচিপা জোনাল অফিসের ৪২ জন কর্মচারী সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের গণছুটিতে গেছেন। এতে অফিসের সব ধরনের দাপ্তরিক কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ, মিটার সংক্রান্ত জটিলতা, বিল সংশোধনসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান না পেয়ে বহু গ্রাহক ফিরে যাচ্ছেন। যদিও ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার বলছেন যে কয়জন উপস্থিত আছেন তাদের দিয়ে নির্বিঘ্ন সেবা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে।
গত শনিবার (০৬ সেপ্টেম্বর) পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সংস্কার, চাকরি বৈষম্য দূরীকরণ ও হয়রানিমূলক পদক্ষেপ বন্ধসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গণছুটিতে যাওয়ার ঘোষণা দেন। আন্দোলন চলাকালে বিদ্যুৎ সরবরাহ যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেজন্য উপকেন্দ্রগুলোতে দু’জন করে বিদ্যুৎ কর্মী অবস্থান করবেন বলে জানানো হয়। গলাচিপা জোনাল অফিস থেকে জানা গেছে, এই আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়ে ৮১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ৪২ জন একযোগে দরখাস্ত দিয়ে গণছুটিতে গেছেন। সকালে পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে কর্মচারীরা একত্র হয়ে ছুটির দরখাস্ত জমা দেন এবং পরে অফিস ত্যাগ করেন।
পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা চলছে। কিন্তু আমাদের দাবি মানা তো দূরের কথা, উল্টো অন্যায়ভাবে বরখাস্ত, বদলি ও চাকরিচ্যুতি করা হচ্ছে। এতে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কর্মরতদের চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত ও বরখাস্তদের পুনর্বহাল, অব্যবস্থাপনার অবসান, বদলির নামে হয়রানি বন্ধ, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ।
এদিকে অফিসগুলোর দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের সেবায় ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটছে। সেবা না পেয়ে ফিরে যাওয়া গ্রাহকদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম, নিখিল মাল, আলমগীর সহ অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কারো মিটার নষ্ট, কারো বিদ্যুৎ বিল বেশি আসা, আবার কারো নতুন সংযোগের আবেদন দীর্ঘদিন ঝুলে আছে। কিন্তু কর্মকর্তারা না থাকায় এসব সমস্যার কোনো সমাধান হচ্ছে না। গ্রাহকরা বলছেন, সময়, শ্রম ও অর্থ—সবই নষ্ট হচ্ছে। অথচ জরুরি সেবা বন্ধ থাকার কারণে আমরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছি। তারা বলেন, অফিস থেকে বলা হচ্ছে আন্দোলন চলছে গণছুটিতে গেছে কর্মচারীরা তাই সেবা বন্ধ।
সরেজমিনে সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে গলাচিপা জোনাল অফিসে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন কক্ষের চেয়ার ফাঁকা কোন কর্মকর্তা কর্মচারী নেই। বিল গ্রহণ বিভাগে ক্যাশিয়ার ও বিল গ্রহণের সাথে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন সদস্য রয়েছেন। অফিসে কম্পিউটার অপারেটর ও এজিএমকে পাওয়া গেলোও কোন সেবা দিতে দেখা যায়নি। এছাড়া ২জন লাইনম্যান, ১জন টেকনিশিয়ান কে দেখতে পাওয়া যায়। তবে বর্তমানে গলাচিপা জোনাল অফিস ও উপকেন্দ্র মিলিয়ে ৩৯ জন কর্মস্থলে উপস্থিত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন গলাচিপা জোনাল অফিসের ডিজিএম ছিদ্দিুকুর রহমান তালুকদার।
তিমি বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গণছুটিতে গেছেন। কর্মরত ৮১ জনের মধ্যে ৪২জন পটুয়াখালী জিএম স্যারের কাছে দরখাস্ত দিয়ে গণছুটিতে চলে গেছেন। তবে সেবা না পেয়ে ফিরে গেছেন যারা, তাদের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি অফিসের কাজে বাহিরে ছিলাম বিকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করলে হয়তো সেবা পেতো। তবে তিনি সেবা যে ব্যহত হচ্ছে সেটি স্বীকার করেন।
তিনি আরও জানান, এ অবস্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কোনো কারণে ট্রিপ না করলে নির্বিঘ্ন বিদ্যুৎ সচল রাখা যাবে। যে কজন উপস্থিত আছে তাই দিয়ে সেবা চালানোর চেষ্টা চলছে বলে জানান। তিনি আশা করেন দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।
যদিও গ্রাহক ও স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে বিদ্যুৎ সেবায় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। বিশেষ করে লোডশেডিং, লাইন মেরামত বা আকস্মিক বিপর্যয়ের সময় পর্যাপ্ত কর্মী না থাকলে গ্রাহকরা আরও ভয়াবহ সংকটে পড়বেন। গত রোববার ০৭ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত ৭ ঘন্টার বেশি সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিলো গলাচিপা উপজেলায়। যদিও বিদ্যুৎ অফিস বলছে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ বন্ধ ছিলো।