খুলনার পাইকগাছা উপজেলার ৯নং চাঁদ খালী ইউনিয়নের পূর্ব শত্রুতার জেরে দেশীয় অস্ত্র( দা, ছুরি ,শাবল ও লাঠি) দিয়ে গুরুতর জখম করা হয়

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার ৯নং চাঁদ খালী ইউনিয়নের পূর্ব শত্রুতার জেরে দেশীয় অস্ত্র( দা, ছুরি ,শাবল ও লাঠি) দিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার(১৮/০৬/২০২৫) বিকাল পাঁচটার সময়।
কে.জি.এইচ.এফ. মৌখালী ইউনাইটেড একাডেমীর অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্র শক্তিপদ মন্ডল মামার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে। এই ঘটনা ঘটার পূর্বে দীর্ঘ পাঁচ-ছয় দিন একটানা বৃষ্টি হওয়ায় নদী-নালা, খাল-বিল পানিতে ভরে যায়। এই সুযোগে শক্তিপদ মন্ডল তার দাদু দিদার বাড়িতে রাখা পাতা জাল নিয়ে বিলে পেতে মাছ ধরার জন্য যায়। শক্তিপদ মন্ডল দেশীয় কৈ,শোল,ট্যাংরা, পুটি ইত্যাদি মাছ ধরার জন্য জাল পেতে রেখে বাড়িতে ফিরে আসে। এই খবর জানতে পেরে পার্শ্ববর্তী বাড়ির গুণ্ডা ও দস্যু প্রকৃতির লোক মনোরঞ্জন সানা ওরফে মনু(৫২) বিলে যেয়ে শক্তিপদ'র পাতা জাল তুলে ছিড়ে ফেলে এবং বলে তোরে আজকে পেলে মেরে দামের তলায় ঢুকিয়ে দেবো এবং চিরতরে তোর জাল পাতার স্বাদ মিটিয়ে দেবো। তোর জাল পাতার কারণে আমাদের ডোবায় মাছ আসতে পারবে না ।এছাড়া বিভিন্নভাবে খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে।
১৮/০৬/ ২০২৫ তারিখ রোজ বুধবার বিকালে প্রতিদিনের মতো শক্তিপদ প্রাইভেট পড়ার উদ্দেশ্যে বের হয়ে মনোরঞ্জন সানা বাড়ির পাশ দিয়ে পায়ে হেঁটে যেতে থাকে। এমন সময় মনোরঞ্জন সানা ওরফে মনু( ৫২ ),স্ত্রী চায়না রানী সানা (৪৮), পুত্র অনিল সানা (৩০ ),অনিল সানা'র, স্ত্রী কৌশল্যা রানী সানা (২৭ ), গোপীনাথ সানা মিলে শক্তিপদকে ধরে মারতে থাকে এবং মনোরঞ্জন সানার হাতে থাকা দা এর ধারালো পিঠের অপর পিঠ দিয়ে শক্তিপদ'র ঘাড়ে ,পিঠে এবং মাজায় একাধিকবার আঘাত করে। এ সময় শক্তিপদ চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকে। শক্তিপদ'র চিৎকার চেঁচামেচি শুনে তার দিদা ময়না রানি সানা( ৬০ )ও মেঝ মামা রাজীব কুমার সানা ছুটে আসে তাকে বাঁচাতে। এ সময় শক্তিপদকে ছেড়ে তারা সকলে ময়না রানী সানা ও রাজীব কুমার সানাকে ধরে ফেলে এবং প্রচন্ড মারধর ও গুরুতর জখম করে। মনোরঞ্জন সানা ওরফে মনুর হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্র দা'য়ের আঘাতে ময়না রানী সানার বাম চোখের নিচে কেটে যায় এবং প্রচন্ড রক্তক্ষরণ হয়। চায়না রানী সানা ও কৌশল্যা সানা চুলের মুঠি ধরে ময়না রানী সানাকে বুকে পিঠে একাধিক আঘাত করে।অনিল সানা এর হাতে থাকা শাবল দিয়ে ময়না রানীর মাথায় আঘাত করে ফলে ময়না রানীর ব্রেনে রক্তক্ষরণ হয়। অনিল সানা ও গোপীনাথ সানা তাদের হাতে থাকা শাবল ও লাঠি দিয়ে রাজীব কুমার সানার হাতে বাড়ি মারে। এবং বলতে থাকে তোদের সব কয়টারে আজকে এখান থেকে ফিরে যেতে দেব না ,মেরেই ফেলব। জমির সাদ চিরতরে মিটিয়ে দেব।প্রচন্ড আঘাতের ফলে রাজীব সানার ডান হাতের কব্জি খুলে যায়। এটা পরবর্তীতে এক্সরেতেও ধরা পড়ে।
আমি খুলনা জেলার বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে খুলনা মেডিকেল কলেজ (২৫০ বেডে) গিয়ে বিভিন্ন এক্সরে-এর ছবি, সিটি স্ক্যান এর বিষয় এবং রোগীর সার্বিক বিষয় নিয়ে খুলনা ২৫০ বেডের নিউরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডাক্তার কমলেশ সাহা-এর সাথে সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে জানতে পারি ময়না রানীর মাথায় রক্তক্ষরণ হয়ে ব্রেনে জমাট বেঁধে আছে ।অধ্যাপক ডাঃ কমলেশ সাহা আরো বলেন যে রোগীর অবস্থা মোটেও ভাল নয় এবং মাঝে মাঝে শর্ট টাইম মেমোরি লস হচ্ছে। ফলে রোগী ভুল বকছে।
মোঃ কামাল শেখ (২৮), পিতা -মোঃ সুরত আলী শেখ ,গ্রাম- মৌখালী, আহতদের বাড়ির পাশের লোক এবং প্রত্যক্ষদর্শী। তার কাছ থেকে জানা যায় মনু সহ তার পরিবারের সকল লোক দস্যু প্রকৃতির। তারা প্রায়ই এভাবে ময়না রানী সানার পরিবারের উপর একাধিকবার মারধরসহ ক্ষয়ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে। তারা পেশী শক্তি ও দেশীও অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে জোরপূর্বক জমিও দখল করে নিয়েছে। সেই জমি নিয়ে আজও মামলা চলছে।
১৮/০৬/২৫ তারিখ রোজ বুধবার সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে সাতটার দিকে গুরুতর আহত ব্যক্তিদের নিয়ে পাইকগাছা টিটিসি সেনাবাহিনী ক্যাম্পে যাওয়া হয়। সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তাদেরকে থানায় যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন এবং বলেন আপনারা থানায় যান এবং মামলা করেন। যদি থানায় মামলা নিতে অস্বীকার করে তাহলে তখন আমাদেরকে জানাবেন। সেই মোতাবেক রোগীর লোকজন রোগীদের নিয়ে থানায় যান এবং ডিউটি অফিসার সহ ওসি মহোদয় কে বিষয়টি অবগত করেন। ডিউটি যে অফিসার রোগীর অবস্থা ভালো নয় দেখে দ্রুত পাইকগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলেন এবং পরবর্তীতে এ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে বলে আশ্বস্ত করেন। বর্তমানে থানায় মামলা করার জন্য প্রস্তুতি চলছে।