টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে অবৈধ করাতকলের ছড়াছড়ি। আর এসব করাতকল স্থাপন করা হয়েছে বন ঘেঁষে এবং বন সংলগ্ন। ফলে বিলুপ্তির পথে সংরক্ষিত বনের শাল-গজারিসহ অন্যান্য বৃক্ষ। ঘাটাইল বন বিভাগের ধলাপাড়া রেঞ্জ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় মোট করাতকল রয়েছে ৭৭ টি। যার মধ্যে নিবন্ধন নেই ৫৯ টির। পৗরসভা এবং এর আশেপাশের এলাকায় মাত্র ১৮ টি করাতকলের নিবন্ধন রয়েছে। ঘাটাইলে সামাজিক ও সংরক্ষিত বনভূমির পরিমাণ ২৫ হাজার ৭১১ একর। এই ভূমি দেখভালের জন্য রয়েছে বন বিভাগের একটি রেঞ্জের আওতায় ছয়টি বিট অফিস। বনাঞ্চলসহ পরিবেশ রক্ষায় উপজেলায় রয়েছে বন ও পরিবেশ কমিটি। এই কমিটির কর্যক্রম চলছে শুধু কাগজে-কলমে। সরেজমিনে দেখা যায়, অবৈধ করাতকল স্থাপন করা হয়েছে কোথাও সামাজিক ও সংরক্ষিত বন ঘেঁষে আবার কোথাও বন সংলগ্ন। রেঞ্জ ও বিট অফিসের নাকের ডগায় করাতকল স্থাপন করে দিনরাত চলছে বৈধ ও অবৈধ কাঠ চিরাই। অবৈধভাবে সংরক্ষিত বন থেকে শাল-গজারি কেটে এসব করাতকলে চিরাই করলেই হয়ে যায় বৈধ। অথচ বন আইনে বলা আছে বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে করাতকল স্থাপন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। স্থানীয়রা জানায়, বন বিভাগের লোকদের চোখ ফাঁকি দিয়ে করাতকল স্থাপন করা কোনোভাবেই সম্ভব না। উপজেলার মাকড়াই এলাকায় বনের জমিতে বসানো হয়েছে বনের কাঠের হাট। ওই একই বনের জমিতে স্থাপন করা হয়েছে তিনটি করাতকল। করাতকলের মালিক শাহজাহান সাজু বলেন, আমি করাতকল বিক্রি করে দিয়েছি রতন খানের কাছে। কোনো বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা? তার সোজা উত্তর- মাকড়াই এলাকায় যত স’মিল আছে কোনোটারই কাগজপত্র নেই। ওই এলাকায় আরও যে দু’টি করাতকল রয়েছে তার মালিক শাহাদৎ হোসেন ও দুলাল হোসেন। এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ প্রাকৃতিক বন থেকে শাল-গজারি বিলুপ্তির জন্য দায়ি অবৈধ করাতকল। তাদের কথার সত্যতা মেলে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি। ওইদিন গোপন তথ্য অনুযায়ী জানা যায় উপজেলার ল্যাংড়াবাজার এলাকায় শাল গাছ কাটা হচ্ছে। নীল-হলুদ রঙের মিনিট্রাক ভরে গাছের গুঁড়ি নেওয়া হবে কোনো এক করাতকলে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর দেখা মেলে কাঙ্খিত মিনিট্রাকের। মিনিট্রাকটি গিয়ে থামে ওই কাঠের হাটের শাহজাহান সাজুর করাতকলে। পেছনে পেছনে হাজির হন সন্ধানপুর ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক আবু সাইদ। মিনিট্রাক থেকে দ্রুত শ্রমিকরা নামালেন শাল গাছের অনেকগুলো গুঁড়ি। গোপনে ছবি তুলে সচেতন নাগরিক সেজে ফোনে বিষয়টি ওইসময় বন বিভাগের ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তাকে অবগত করলে দেখছি বলে ফোন কল কেটে দেন তিনি। এ বিষয়ে বন বিভাগের ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা ওয়াদুদুর রহমান বলেন, সাত মাস আগে একবার করাতকলের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হয়। সেসময় তিনটি অবৈধ করাতকল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। আপনাদের চোখের সামনে বনের জমিতে করাতকল স্থাপন করা হয়েছে, স্থানীয়দের অভিযোগ বন বিভাগ প্রতিমাসে টাকার বিনিময়ে অবৈধ করাতকলগুলোকে বৈধতা দেয় এসব কথার সত্যতা কতটুকু? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, করাতকলগুলো থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয়না। তালিকা করা হয়েছে অচিরেই অভিযান পরিচালনা করা হবে।