রাষ্ট্রপতি মো: আব্দুল হামিদ বলেছেন, দেশের মানুষ অনেক কষ্টে আছে, সেটি আমি জানি। সারা বিশ্বটাকে এখন গ্লোবাল ভিলেজ বলে। মিঠামইনের একটা গ্রামের সাথে আরেকটা গ্রামের যেমন সম্পর্ক, ঠিক তেমনি সারা বিশ্বে যত দেশ আছে তার একটি দেশের সাথে আরেকটি দেশের তেমনি সম্পর্কযুক্ত। সারা বিশ্ব এখন একটা আর্থিক সমস্যার মধ্যে আছে। বিশ্বে এখন অস্থিরতা চলছে। ২০২০ সাল থেকে সারা বিশ্বে করোনার মহামারি শুরু হয়েছে। করোনার প্রভাবে অনেক দেশ নাজেহাল অবস্থায় পড়েছে। বিশ্ব যখন করোনার ধকল কাটিয়ে সামলে উঠার চেষ্টায়রত তখনি আবার ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়েছে। সে যুদ্ধের প্রভাব সারা বিশ্বে তেলের উপরে প্রভাব পড়েছে। যে কারণে তেলের দাম বেড়েছে। এতে মানুষ কিছুটা সমস্যা আছে। সারা বিশ্ব ভালো না থাকলে আমরা ভালো থাকতে পারবো না।
তিনি সোমবার সন্ধ্যায় মিঠামইনে সুধী সমাবেশে মত বিনিময়কালে এসব কথা বলেন।রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, শ্রীলংকায় কি হয়েছে, সেখানে একটি সরকার পরিবর্তন হয়েছে, তাতে কী হবে? হয়তো আরেকটি সরকার আছে, এই সরকারকেও পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু শ্রীলংকার আর্থিক অবস্থা যে পর্যায়ে চলে গেছে, যত সরকারই আসুন, জানিনা আল্লাহর ফেরেস্তারা এসে যদি সরকার গঠন করে তাহলে হয়েতো পরিবর্তন হতে পারে কিনা জানিনা। শ্রীলংকায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা এখন সম্ভব নয়। তাদের সময়ের দরকার। এমন একটা পরিস্থিতিতে শুধু শ্রীলংকা নয় অনেক দেশ এ সমস্যার সম্মুখীন।তিনি সাম্প্রতিক সময়ে হাওরের বন্যা প্রসঙ্গে অলওয়েদার সড়ককে দায়ী করে আলোচনার প্রসঙ্গে বলেন, সিলেট থেকে বলা হচ্ছে একটিমাত্র ব্যক্তির জন্য অলওয়েদার রাস্তা করা হয়েছে।
এই যে রাস্তাটা আমার বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দুর। এই রাস্তার কারণে সিলেট সুনামগঞ্জে বন্যা হয়েছে। বন্যা হইলে জানতাম, গারো পাহাড়ের পানি এসে আমাদের এখানে বন্যা হয়। পানি সিলেট সুনামগঞ্জ থেকে ইটনা মিঠামইন অষ্টগ্রামের হাওরে বন্যা হয়। তাহলে এই রাস্তার কারণে কিভাবে বন্যা হলো তা বুঝতে পারলাম না। হাওরের অলওয়েদার সড়কের কারণে বন্যার বিষয়টি একটি মিথ্যাচার ও প্রতিহিংসা পরায়ন বক্তব্য। হাওরের উন্নয়নে ঈষান্বিত হয়ে এমন বক্তব্য দেয়া হচ্ছে।তিনি আরো বলেন, আমি বঙ্গভবনে অনেকটাই বন্দী জীবন যাপন করি। ইচ্ছা করলেই আসতে পারি না। আসার সময় মনে হয় সবার সাথে দেখা সাক্ষাত করবো কিন্তু সেটি হয়ে উঠেনা। তবে আর ৭/৮ মাস পর অবসরে যাওয়ার পর সাধারণ মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাত করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।এর আগে বিকেল চারটার দিকে রাষ্ট্রপতি ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে মিঠামইন হেলিপ্যাডে নামেন। এসময় পরিবারের সদস্য প্রশাসনের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ রাষ্ট্রপতিকে অর্ভ্যথনা জানান।
এরপর জেলা পরিষদের নতুন ডাক বাংলাতে রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার প্রদর্শন করা হয়। সেখান থেকে তিনি তাঁর ভাইয়ের নামে প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক সরকারি কলেজ পরিদর্শন করেন।এসময় কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতির ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক,কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন,ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত ডিআইজি মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম(বার), কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, জেলা আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান,সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজল সহ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চারদিনের এ সফরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম এ তিন উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিদর্শন ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার সাথে মতবিনিময় করবেন। এ তিনটি উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-৪ সংসদীয় আসন থেকে রাষ্ট্রপতির আবদুল হামিদ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।