২৭ দশমিক ২০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ফেনী শহরে প্রায় ৪ লাখের বেশি মানুষের বসবাস। জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই শহরে গণশৌচাগারের অভাব দীর্ঘদিন ধরেই একটি বড় সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। প্রতিদিন শহরের প্রধান সড়ক, বাজার এবং জনসমাগমস্থলে চলাফেরা করেন হাজারো মানুষ। তবে প্রয়োজনীয় পাবলিক টয়লেটের অপ্রতুলতা তাদের চরম ভোগান্তিতে ফেলছে।


ফেনী পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, শহরে মাত্র পাঁচটি পাবলিক টয়লেট রয়েছে। এর মধ্যে সদর হাসপাতালের পাশের একটি, পৌর হকার্স মার্কেটে একটি, মহিপাল বাস টার্মিনালে একটি, সোনাগাজী বাসস্ট্যান্ডে একটি এবং ইসলামপুর রোডে একটি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ইসলামপুর রোডের টয়লেটটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। অন্য চারটি টয়লেটেরও রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার প্রয়োজন, কারণ এগুলো অনেকটাই ব্যবহার অনুপযোগী।


বিশেষত শ্রমজীবী মানুষ, পথচারী এবং বাজারে আসা ক্রেতারা টয়লেটের অভাবে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন। বাধ্য হয়ে তারা অস্বাস্থ্যকর ও অনিরাপদ স্থানে প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারছেন, যা জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

নারীদের জন্য এই পরিস্থিতি আরও জটিল। মিষ্টি চৌধুরী নামে এক চাকরিজীবী নারী জানান, প্রতিদিন বাইরে বের হয়ে কয়েক ঘণ্টা পরপর প্রাকৃতিক প্রয়োজন দেখা দেয়। কিন্তু শহরে পাবলিক টয়লেটের অভাবে নারীদের বিশেষ সমস্যায় পড়তে হয়। অনেক সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখতে হয়, যা তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়।

একই সমস্যার কথা জানালেন কলেজ শিক্ষার্থী জান্নাতুল আইনুন। তিনি বলেন, টয়লেট ব্যবহার করতে না পেরে মেয়েদের অনেক সময় অসহনীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। জরুরি প্রয়োজনে মার্কেটের কোনো টয়লেট ব্যবহার করতে গেলেও সেখানে পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তার অভাব প্রকট।

শহরের বিভিন্ন খোলা জায়গায় প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারার কারণে পরিবেশ দূষণের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। এতে জনস্বাস্থ্যও হুমকির মুখে পড়ছে। চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘসময় প্রস্রাব চেপে রাখার কারণে কিডনি সমস্যা, ব্লাডার ফুলে যাওয়া এবং মূত্রনালির সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।


এ পরিস্থিতি নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন শহরবাসী। সমাজকর্মী মিনহাজ আহমেদ বলেন, শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে নারী, পুরুষ এবং প্রতিবন্ধীবান্ধব আধুনিক পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি। পরিবেশবিদরাও একই দাবি জানিয়ে বলেছেন, টয়লেটের অভাবে পরিবেশ দূষণ বাড়ছে, যা শহরের সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

এ বিষয়ে ফেনী পৌর প্রশাসক গোলাম মো. বাতেন বলেন, "পাবলিক টয়লেটের যথাযথ ব্যবস্থা করতে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে উপযুক্ত জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজাঝির দিঘীর পাড়ে একটি টয়লেট স্থাপনের কাজ শুরু হলেও জমি সংক্রান্ত মামলার কারণে তা আটকে গেছে। তবে আমরা দ্রুত এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেব।"

শহরের সৌন্দর্য, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ফেনীতে দ্রুত পর্যাপ্ত এবং মানসম্মত পাবলিক টয়লেট স্থাপন এখন সময়ের দাবি।