ফেনীর আলোচিত শিশু আহনাফ আল মাঈন নাশিত (১০) এর হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে ফেনী জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গন এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, নিহত নাশিতের স্বজন ও এলাকাবাসী। এর পূর্বে সকালে আদালতে তোলার জন্য আসামিদের কোর্ট হাজতে আনা হয়। মানববন্ধনে নির্মম এই হত্যাকান্ডের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়।উল্লেখ্য, গত বছরের ১২ ডিসেম্বর বিকেলে ফেনীতে নিখোঁজের চারদিন পর ফেনী পৌর এলাকার দেওয়ানগঞ্জে পরিত্যক্ত ডোবা থেকে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া শিশু নাশিতের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে আশরাফ হোসেন তুষার (২০), মোঃ মোবারক হোসেন ওয়াসিম (২০) ও ওমর ফারুক রিফাত (২০) নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।নিহতের পরিবার সূত্র জানায়, ফেনী শহরের একাডেমী এলাকার একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন নাশিত ও তার পরিবার। নাশিত ফেনী একাডেমি এলাকার গ্রামার স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীতে লেখাপড়া করত। নাশিতের বাবা মাঈন উদ্দিন সোহাগ ফেনী রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে কর্মরত। নাশিত ৮ ডিসেম্বর রাত অনুমান সাড়ে সাতটার সময় প্রাইভেট পড়া শেষে বাসায় ফিরে না আসায় বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন তার পরিবার। কোন সন্ধান না পেয়ে ৯ ডিসেম্বর ফেনী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন নাশিতের বাবা মাঈন উদ্দিন সোহাগ। বাদীর হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্ন মেসেজের মাধ্যমে নাশিতের মুক্তিপণ বাবদ ১২ লক্ষ টাকা দাবি করে। এ প্রেক্ষিতে বাদী থানায় এসে নাশিতের অপহরণ ও মুক্তিপণ বিষয়ে এজাহার দায়ের করলে ১২ ডিসেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ফেনী মডেল থানায় মামলা রুজু হয়।উক্ত ঘটনায় পুলিশ আসামি আশরাফ হোসেন তুষার (২০) কে আতিকুল আলম সড়ক এবং মোঃ মোবারক হোসেন ওয়াসিম (২০) ও ওমর ফারুক রিফাত (২০) কে বিসিক এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।পুলিশ সূত্র জানায়, গত ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ রাত আট ঘটিকার সময় আসামি আশরাফ হোসেন তুষার ও মোঃ মোবারক হোসেন ওয়াসিম নাশিতের পূর্ব পরিচিত হওয়ায় সু-কৌশলে আসামিদ্বয় শিশু নাশিতকে ফেনী শহরের আতিকুল আলম সড়ক থেকে সালাউদ্দিন মোড় এলাকায় নিয়ে যায়। আসামি মোঃ মোবারক হোসেন ওয়াসিম যোগাযোগ করে আসামি ওমর ফারুক রিফাতকে ঘটনাস্থলে আনলে সকল আসামিগণ নাশিতকে সালাউদ্দিন মোড় সংলগ্ন রেললাইনে নিয়ে যায়। নাশিতের ছবি এবং ভিডিও বাদী নাশিতের বাবাকে প্রেরণ করে ১২ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করে। আসামি আশরাফ হোসেন তুষারের নির্দেশনা মতে আসামি মোঃ মোবারক হোসেন ওয়াসিম জুসের সাথে ঘুমের ঔষুধ মিশিয়ে পান করালে নাশিত ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পর বাড়ীতে চলে যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করলে আসামিগণ নাশিতকে রেললাইন সংলগ্ন ঝাউবনে নিয়ে পরষ্পর মিলে ৮ ডিসেম্বর দিবাগত রাত অনুমান দেড়টা থেকে আড়াইটার সময় শ্বাসরোধে হত্যা করে। নাশিত আসামিদের পুর্ব পরিচিত ছিল, তাই আসামিগণ নাশিতকে ছেড়ে দিলে জানাজানি হয়ে যাবে ভেবে ভয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার ঘটনা আড়াল করার জন্য আসামিগণ নাশিতের স্কুল ব্যাগে ভিতর পাথর ভর্তি করে সেটি তার কাঁধে চাপিয়ে ঝাউবন সংলগ্ন কুচুরিপানা ভর্তি ডোবায় লাশ গুম করে। ৯ ডিসেম্বর দিনের বেলায় আসামিরা ডোবায় পার্শ্বে গিয়ে লাশ যথাযথ স্থানে আছে কিনা যাচাই করতে যায়। আসামিরা ১০ ডিসেম্বর ডোবা থেকে সিএনজি যোগে লাশ অন্যত্র নেয়ার পরিকল্পনা করলেও স্থানান্তর করতে পারেনি। নাশিতকে হত্যার করার পরও আসামিরা বাদীর নিকট পূর্বের মুক্তিপনের টাকা দাবি করতে থাকে। বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে অত্র মামলা রুজু হওয়ার আট ঘন্টার মধ্যে অত্র মামলার ঘটনার সহিত জড়িত আসামিদের গ্রেফতার, মরদেহ উদ্ধার ও মামলার মূল রহস্য উদঘাটন হয়।