ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে চাকরি প্রত্যাশীদের ফাঁদে ফেলে মোটা অঙ্কের টাকা লুটে নিচ্ছে একদল কুচক্রী মহল। এর মধ্যে একটি কুচক্রী মহলের ঠিকানা হচ্ছে উত্তরা, আজমপুর, কাঁচাবাজার চৌরাস্তা মোড়, রাকিব ভিলার দ্বিতীয় তলায়।
গত পরশু শনিবার (২৭ এপ্রিল) অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে থলের বিড়াল। কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী থানার কারপাশা ইউনিয়ন থেকে তাদের ফেসবুকে চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে আবেদন করেন মোঃ সুলতান মিয়া নামের এক মাদ্রাসা ছাত্র। সে ঢাকায় প্রথমবারের মতো চাকরির আশায় আসে ঐ প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করতে। এমন সময় তার সঙ্গে আমিও যাই মূল ঘটনা অনুসন্ধানের জন্য। সুলতান মিয়া জানান যে তাকে ঐ কুচক্রী মহল সহকারী সুপারভাইজার হিসেবে যোগদান করাবে এবং তার বেতন ধরা হবে ২৩০০০/- থেকে ২৫০০০/- টাকা।
এবং অফিসের ঠিকানা দেয় আজমপুর পুলিশ হেডকোয়ার্টার এর পাশে( মূলত তাদের নিজস্ব ঠিকানা গোপন রাখতেই এই ঠিকানা ব্যবহার করে)। তবে তাদের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল নাম্বারও সেখানে উল্লেখ করে যেগুলো হলো: ০১৭৫৮৫৫৯৪২৫ এবং ০১৮৭৬৮৪৪৫৭৯।
কুচক্রী মহলের অন্যতম প্রধান সদস্য হাজী আমিন শেখ ( সে নিজেকে হাজী এবং সিনিয়র মেনেজার হিসেবে পরিচয় দেয়) যাতে করে চাকরি প্রত্যাশীরা সহজে ফাঁদে পা দিয়ে ফেলে।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে অনুসন্ধানে গেলে তারা একটি নির্দিষ্ট ঠিকানা দেয় যেখানে অপেক্ষারত অবস্থায় থাকার সময় তাদের নিজস্ব কর্মী এসে তাদের গোপন আস্তানায় নিয়ে যায়। শুরুতেই তারা একটি আবেদন ফরম ধরিয়ে দেয় যার মূল্য তিনশো টাকা এবং কোম্পানির আইডি কার্ড বাবত ২০০ টাকা মোট ৫০০ টাকা নিয়ে নেয়।
এরপর ধাপে ধাপে বিভিন্ন স্ক্যাম বুঝায় যেমন তারা পরিচয় হিসেবে ব্যবহার করে যমুনা গ্রুপ, ওয়ালটন গ্রুপ ও স্যামসাং গ্রুপের মূলত এদের সাথে কোন যোগসূত্র নেই এই কুচক্রী মহলের । চাকরি প্রত্যাশীদের কাছে একটা মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে, যেটি দিতে অস্বীকৃতি জানালে বলে যে আবেদন টাকাসহ বাতিল হয়ে যাবে। এরপর পরিস্থিতি আর গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য জানাতে চাই যে চাকরি পেয়ে বেতন থেকে এই টাকা কেটে রেখে দেওয়ার কোনো সুযোগ আছে কি না, এতে তারা অস্বীকৃতি জানান। পরে তাদের কাছে এই টাকা নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তারা বিভিন্ন অজুহাতে দেখাতে থাকে একপর্যায়ে যখন বলা হয় যে আপনাদের এই চাকরি দেওয়ার নিশ্চয়তা কি, আপনাদের এজেন্সির মূল পরিচয় কি এবং আপনারা কেন আপনাদের ঠিকানা গোপন রেখে কাজ করছেন। এতে করে তারা উশৃঙ্খল ও উগ্র ব্যবহার করতে শুরু করে, এবং বিভিন্ন ধরণের ভয় দেখানোর চেষ্টা করে।
এবং হাজী আমিন শেখ নামের কুচক্রী সদস্য অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ বিভিন্ন হেনস্থা মূলক আচরণ করতে থাকে। এমন সময় চাকরি প্রত্যাশী মোঃ সুলতান মিয়া ঘাবড়ে যায় এবং সেখানে থেকে বের হতে চেষ্টা করে, তখন কৌশলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে সেখান থেকে তাকে নিয়ে বেরিয়ে যাই। ঘটনার সত্যতার জন্য গোপন ক্যামেরা ব্যবহার করে তাদের ছবি (ছবিতে হাজী আমিন শেখ ও তার এক সহযোগি) এবং কথোপকথন রেকর্ড করা হয়।
ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে যেমন গাজীপুর চৌরাস্তা, টঙ্গী, আব্দুল্লাহপুর এবং উত্তরাসহ অনেক জায়গায় এমন কুচক্রী মহলের ঘাঁটি রয়েছে। যারা বিভিন্ন চাকরি লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকেন। আর তাদের মূল টার্গেট থাকে গ্রামের সহজ-সরল চাকরি প্রত্যাশী যুবক-যুবতীদের উপর। তাদের ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্ব হারিয়ে অনেকেই হয়ে পড়ছেন দিশেহারা। এসব কুচক্রী মহলের ঘাঁটি খুব বেশি দিন এক জায়গায় থাকে না, তারা নিয়মিত তাদের স্থান পরিবর্তন করতে থাকে। বিভিন্ন সময় পুলিশের ভিন্ন ভিন্ন অভিযানে তাদের অনেকেই আটক করলেও কমছে না তাদের উৎপাত।
সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধে জানানো যাচ্ছে ফেসবুকে এমন ভিত্তিহীন বিজ্ঞান দেখে কখনো ফাঁদে পা দিবেন না।