জামালপুরের বকশীগঞ্জে জমি নিয়ে সংঘর্ষে নিহত দুলাল শেখ হত্যা মামলার আসামীদের বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট থামছে না। গত ১৭ আগষ্ট সংঘর্ষে মারা যান দুলাল শেখ।

এরপর থেকেই দফায় দফায় আসামী পক্ষের প্রায় ২০-২৫ টি বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করেছে বাদী পক্ষের লোকজন এমন অভিযোগ আসামীপক্ষের স্বজনদের। কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বসত ভিটায় থাকা গাছপালাও। ঘটনাটি উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নের ভাটি কলকিহারা গ্রামে। গ্রেফতার আতঙ্ক ও বাদী পক্ষের লোকজনের ভয়ে গ্রাম ছাড়া প্রায় শতাধিক পরিবার। পুলিশ বলছেন খবর পেয়ে বেশ কয়েকবার যান তারা। দূর্গম চর হওয়ায় তারা যাওয়ার আগেই সটকে পড়েন অভিযুক্তরা।  
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নের ভাটি কলকিহারা গ্রামের দুলাল শেখ গংদের সাথে একই গ্রামের বিল্লাল আলী গংদের বিরোধ চলে আসছিল। এই নিয়ে চেয়ারম্যান মেম্বারদের উপস্থিতিতে একাধিকবার গ্রাম্য শালিস বৈঠক হয়। কিন্তু শালিস বৈঠকে কোন সুরাহা হয়নি। গত ১৭ আগষ্ট জমিতে সেচ দিতে যান বিল্লাল আলী ও তার লোকজন। এ সময় দুলাল শেখের লোকজন বাধাঁ দেয়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রায় ঘন্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে নারী পুরুষসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। সংঘর্ষে গুরুতর আহত দুলাল শেখকে মুমুর্ষ অবস্থায় জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। নিহত দুলাল শেখ একই গ্রামের সেকান্দর আলীর ছেলে।
খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনায় ১৮ আগস্ট নামীয় ৪২ জনসহ অজ্ঞাতনামা ১০-১৫ জনকে আসামী করে বকশীগঞ্জ থানায় মামলা করেন নিহত নিহত দুলাল শেখের ছেলে সেহাগ মিয়া। এ ঘটনায় চারজনকে আটক করে পুলিশ। যাদের আটক করা হয় তারা হলেন বাবুল মিয়া,শামছুল হক,আলি হোসেন ও জাফর আলী।
দুলাল শেখের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে গ্রেপ্তার আতঙ্ক ও বাদী পক্ষের লোকজনের ভয়ে এলাকা ছাড়েন বিল্লাল আলীসহ তার পক্ষের লোকজন। এই সূযোগে তাদের বাড়িঘরে ব্যপক ভাংচুর ও লুটপাট চালায় বাদী পক্ষের লোকজন। এরপর থেকেই আসামীদের বাড়িঘরে নিয়মিত চলছে ভাংচুর ও লুটপাট। সোমবার সকালে গিয়ে দেখা যায় আসামী বিল্লাল আলীর বসত ভিটায় থাকা চারটি ঘরের অস্তীত্ব নেই। তার বসত ভিটা থেকে কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা। গত কয়েকদিনে আসামী পক্ষের অন্তত ২০-২৫ টি বসত বাড়ির ঘরের বেড়া,দরজা,জানালা,ধান,পাট,শুকনা মরিচ, গবাধিপশু,ফ্রীজ,টিভি,নলকপু,ঘরের ভিতর থাকা আসবাবপত্র এমনকি বিদ্যুতের তার ও মিটার খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আতঙ্কে আসামী পক্ষের কোন লোকজন এলাকায় নেই। যদিও কোন কোন বাড়িতে বয়োবৃদ্ধ নারী পুরুষ ও শিশুরা রয়েছেন তারাও দিনাতিপাত করছেন আতঙ্কে। খাবার নেই,নেই পানি ও বিদ্যুৎ। চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। তাদেরকেও এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছেন বাদী পক্ষের লোকজন। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। থামছেই না ভাংচুর ও লুটপাট।
দেখা হয় ফুলেরা বেগম নামে এক নারীর সাথে। কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন,বাড়িতে থাকা সকল জিনিসপত্র নিয়ে গেছে বাদী পক্ষের লোকজন। ঘরের বেড়া টিনের চাল,দরজা,জানালা এমনকি ধানের খৈড় পর্যন্ত নিয়ে গেছে। সারাদিন বাড়ির আশপাশে লোকজন ঘুরাফেরা করে। ভয়ে থাকি কখন জানি এসে হামলা ও মারধোর করে। রাত হলে পাশের গ্রামের আত্মীয়র বাড়িত আশ্রয় নেই।
এ ব্যাপারে মেরুরচর ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম মঞ্জু বলেন,সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আইন মোতাবেক তাদের শাস্তি হবে। কিন্তু এভাবে আসামীদের বাড়িঘর ভাংচুর লুটপাটের বিষয়টি অত্যান্ত দু:খজনক।
জানতে চাইলে মামলার বাদী নিহত দুলাল শেখের ছেলে সোহাগ মিয়া বলেন, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় তার পক্ষের কোন লোকজন জড়িত নয়। তৃতীয় একটি পক্ষ এই ঘটনায় জড়িত। আমি আমার বাবার হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি চাই।
বকশীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদ জানান,সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় টানা ৭ দিন ঔ এলাকায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন ছিল। কোন বাড়িঘরে যাতে হামলা ভাংচুর না হয় সেজন্য বাদী পক্ষের সাথে একাধিকবার কথা বলেছি। এমনকি আসামীদের বাড়িঘর তাদের জিম্মায় দিয়ে আসি। যাতে কোন প্রকার ক্ষতি না হয়। পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার ভাংচুর লুটপাটের খবর পেয়েই পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ভাটিকলকি হারা গ্রামটি দূর্গমচর। যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত। নৌকা দিয়ে নদী পাড় হয়ে যেতে হয়। সেই সূযোগটাই তারা নিয়েছে। অভিযোগ প্রাপ্তি সাপেক্ষে এই ঘটনার সাথে যারাই জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান ওসি।