বরিশালে টিসিবি পণ্য বিতরণের স্বল্পমূল্যে পণ্য বিতরণ কার্যক্রমে নতুন অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে। ডিসেম্বরের শেষ দিকে চালু হওয়া এই কার্যক্রমে জানুয়ারি মাস থেকে স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে পণ্য বিতরণ শুরু হয়েছে। ভুয়া তথ্য প্রদানকারীদের কার্ড বাতিল করে প্রকৃত দরিদ্রদের অন্তর্ভুক্ত করার এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় উপকারভোগীরা। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বরিশাল কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল নগরীতে মোট ৯০ হাজার উপকারভোগী রয়েছে। এদের মধ্যে ৬০ হাজার উপকারভোগীর স্মার্ট কার্ড তৈরি করা হয়নি। কারণ যাচাই-বাছাইয়ে এসব কার্ডে ভুয়া তথ্য পাওয়া গেছে। জেলার ১০ উপজেলায় বর্তমানে টিসিবি কার্ডধারীর সংখ্যা ১ লাখ ২৯ হাজার ৯২১ জন। যাচাইয়ের পর এই সংখ্যা তিন ভাগের দুই ভাগ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই উদ্যোগের ফলে প্রকৃত দরিদ্র জনগোষ্ঠীই টিসিবি পণ্য পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। উপকারভোগীরা টিসিবি কার্ডের মাধ্যমে ২ লিটার সয়াবিন তেল, ২ কেজি ডাল এবং ৫ কেজি চাল পাচ্ছেন মাত্র ৪৭০ টাকায়। বাজারমূল্য প্রায় ৯০০ টাকা হলেও এই পণ্যগুলো স্বল্পমূল্যে পাওয়ায় উপকারভোগীদের অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। চাঁদমারী এলাকার একাধিক উপকারভোগীর অভিযোগ, পূর্বে এক পরিবারে একাধিক কার্ড ছিল। বিশেষ করে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকায় কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা আত্মীয়-স্বজনের জন্য কার্ড বিতরণ করেছেন। একই পরিবারের ৪-৫টি কার্ড থাকার কারণে প্রকৃত দরিদ্ররা বঞ্চিত হচ্ছিলেন। এমনকি অনেক কার্ড ডিলারদের কাছে বিক্রি হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে এই অপব্যবহার বন্ধ হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। চাঁদমারী এলাকার ডিলার মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, তার অধীনে বর্তমানে ২১০০ কার্ডধারী রয়েছেন। যাচাইয়ের পর এই মাসে মাত্র ৬০০ জন স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে পণ্য পাবেন। ভুয়া তথ্য ও ঠিকানা ভুল থাকায় অধিকাংশ কার্ড বাতিল করা হয়েছে। নগরীর ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের সচিব আরাফাত জানান, তাদের ওয়ার্ডের তিন শতাধিক কার্ড যাচাইয়ে বাতিল হয়েছে। তিনি জানান, স্মার্ট কার্ড আসার পর প্রকৃত দরিদ্রদের কাছ থেকে নতুন আবেদন সংগ্রহ করা হতে পারে। টিসিবি বরিশালের সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী শতদল মন্ডল বলেন, “স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে টিসিবি পণ্য বিতরণ কার্যক্রম স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক হবে। যাচাইয়ে একই পরিবারের একাধিক কার্ড পাওয়ার পর তিন ভাগের দুই ভাগ কার্ড বাতিল করা হয়েছে। এখন শুধুমাত্র সঠিক তথ্য প্রদানকারীরাই এই সুবিধা পাবেন।” তিনি আরও জানান, প্রতিটি ওয়ার্ডের সচিবদের মাধ্যমে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হবে। ফলে অনিয়মের সুযোগ কমে যাবে এবং প্রকৃত উপকারভোগীরা তাদের অধিকার নিশ্চিত করবেন। ভুয়া কার্ড বাতিলের সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সাধারণ উপকারভোগীরা। তবে তারা চান, প্রকৃত দরিদ্র যারা এতদিন কার্ড পাননি, তাদের দ্রুত অন্তর্ভুক্ত করা হোক। বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারগুলোর আবেদন দ্রুত গ্রহণ করে তাদের স্মার্ট কার্ড প্রদানের ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। বরিশালে টিসিবির স্মার্ট কার্ড চালু হওয়ায় পণ্য বিতরণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ভুয়া কার্ড বাতিলের পাশাপাশি নতুন দরিদ্র পরিবারগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে এটি সামাজিক বৈষম্য হ্রাস করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।