কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে কৃষক নিবু মিয়া হত্যা মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং প্রকৃত হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিহতের পরিবার।

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে কৃষক নিবু মিয়া হত্যা মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং প্রকৃত হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিহতের পরিবার। একই সঙ্গে মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) অথবা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছেন তারা।

রোববার (৬ জুলাই) বেলা ১১টায় কিশোরগঞ্জ শহরের একটি হল রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিহত নিবু মিয়ার বড় ছেলে ও মামলার বাদী আব্দুর রহমান হৃদয়।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “গত ১৯ অক্টোবর পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমার বাবাকে হত্যা করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা মামলাটিতে গাফিলতি করেছেন। আমাদের পরিবারকে নানা ভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এমনকি চার্জশিট দেওয়ার নামেও টাকা নিয়েছেন।”

হৃদয় আরও জানান, ওই তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে তারা শুনেছেন। এছাড়া মামলাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে তার ছোট ভাই সোহেল মিয়াকে গ্রেফতার করে নির্যাতনের মাধ্যমে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে বলে ও জানান। নিহত কৃষক নিবু মিয়া একজন মানসিক ভারসাম্যহীন রুগী, বিভিন্ন সময় কবিরাজি চিকিৎসা নিয়েছে যা আমাদ প্রতিবেশীরা অনেকেই জানে।

বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও অনিয়মের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে না গিয়ে আসামিপক্ষের লোকজনের সঙ্গে বাজারে বসে চা খেয়ে তদন্ত করছেন। এতে ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে।”

তিনি মামলার তদন্ত নিরপেক্ষভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে বিষয়টি সিআইডি বা পিবিআইয়ের মতো স্বাধীন তদন্ত সংস্থার কাছে হস্তান্তরের দাবি জানান।

নিহত নিবু মিয়ার ছোট ছেলে সোহেল মিয়া বলেন, “পুলিশ আমাকে আটক করে অন্যায়ভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছে। তারা আমাকে মাদকের সাথে জড়িত বলার চেষ্টা করেছে, অথচ আমি কখনোই মাদক বা কোনো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। নির্যাতনের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, আমি কখন অজ্ঞান হয়ে কী বলেছি—তা নিজেরও মনে নেই। যদি আমি সত্যিই আমার বাবার হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতাম, তাহলে তো আমি পালিয়ে যেতাম। কিন্তু আমি তো আমার বাবার লাশ কাঁধে তুলে কবর দিয়েছি, বিচার চেয়েছি। একজন সন্তানের পক্ষে তার বাবাকে হত্যা করা কখনোই সম্ভব না। আমি বিনীতভাবে দাবি জানাচ্ছি—আমার ওপর চালানো অন্যায় নির্যাতনের বিচার হোক এবং আমার বাবার নির্মম হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।”

সংবাদ সম্মেলনে নিহত নিবু মিয়ার স্ত্রী আলেহা খাতুন ও পুত্রবধূ সুবর্ণাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ১৯ অক্টোবর রাতে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের কৃষক নিবু মিয়া ওষুধ কিনতে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। পরদিন দুপুরে পাশের তেলিবাড়ি এলাকার একটি ধানক্ষেত থেকে তার গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় নিহতের ছেলে আব্দুর রহমান হৃদয় বাদী হয়ে বাজিতপুর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে পুলিশ মামলায় নিহতের ছেলে সোহেল মিয়াসহ দুইজনকে আটক করে।