কাতার বিশ্বকাপের উন্মাদনা শুরু হয়ে গেছে সবখানেই। সারাদেশের মতো দ্বীপজেলা ভোলাতেও চলছে সেই উন্মাদনা। প্রায় সব পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন দেশের পতাকা। শহরের খেলার সামগ্রীর দোকানগুলোতে সমর্থকদের জার্সি কেনার ধুম পড়ে গেছে। দোকানীরা বলছেন আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের জার্সি গুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে।

দিন যত ঘনিয়ে আসছে ঠিক ততই বাড়ছে উত্তাপ-উন্মাদনা। এদিকে দলকে ভালোবেসে অজিৎ দে মিঠু নামের এক সমর্থক আর্জেন্টিনার পতাকার আদলে সাজিয়েছেন নিজের বাড়ি। যেটি এখন ‘আর্জেন্টিনা বাড়ি’নামে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। দূর-দূরান্ত থেকে সেই বাড়ি দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন অনেকেই। অজিৎ দে মিঠুন ভোলা সদরের বাপ্তা ইউনিয়নের বাপ্তাগ্রামের বাসিন্দা। তিনি পেশায় মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসায়ী। নিজের উপার্জনের একটা অংশ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে নিজের বাড়ি সাজিয়েছেন অর্জেন্টিনার পতাকার আদলে। আর স্থানীয়রা বাড়িটির নামকরণ করে ফেলেছেন আর্জেন্টিনা বাড়ি হিসেবে। তারা এই বাড়ির পাশে নিজেদের ফ্রেমবন্দি করছেন আর মিঠুনকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। আর্জেন্টিনা দলকে ভালোবেসেই এমনটি করেছেন বলে জানান বাড়ির মালিক অজিৎ। তিনি বলেন, ম্যারাডোনা যখন খেলতো তখন থেকেই আর্জেন্টিনা দলকে ভালোবাসি। দলটির প্রতি ভালোবাসা থেকেই নিজের বাড়ি আর্জেন্টিনার পতাকার আদলে রং করেছি। ​পুরো ঘরটি রং করতে চারজন শ্রমিকের পাঁচ দিন সময় লেগেছে। এতে খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা।

স্বামীর এই উদ্যোগকে সমর্থন করে অজিতের স্ত্রী মিতু রানী বলেন, আমি নিজেও আর্জেন্টিনার সমর্থক। বাড়ি রং করার বিষয়টি আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। বাড়ি দেখতে প্রতিদিন অনেক মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন। সেটি আমার কাছে বিরক্ত না লেগে বরং ভালো লাগে। ‘মৃণাল কান্তি নিবাস’ নামের বাড়িটি এখন সবার কাছেই যেন আর্জেন্টিনা বাড়ি হিসেবে বেশ পরিচিতি পেয়েছে। সেই বাড়িটি দেখতে আসা সাগর মিত্র, নীল কান্ত দে, রাজিব দাস ও খোকন চৌধুরী বলেন, বাড়িটি অনেক সুন্দর হয়েছে। বাড়ির মালিক স্বল্প আয়ের মানুষ হলেও আর্জেন্টিনার প্রতি তার এমন ভালোবাসা অনেকের কাছেই অনুকরণীয়। কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলকে কেন্দ্র করে এমন উন্মাদনা শুধু বাপ্তা গ্রামে নয়, ছড়িয়ে পড়েছে জেলার সব জায়গায়। শহরের পাড়া-মহল্লা, অলিগলিতে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন দেশের পতাকা। জার্সি গায়ে জড়িয়ে দলের সমর্থন নিয়ে যুক্তিতর্কের যেন শেষ নেই সমর্থকদের। প্রিয় দল বিজয়ী হবে এমন প্রত্যাশা তাদের।

আসিব মাহমুদ মার্সেল বলেন - আশা করি এবার  আর্জেন্টিনা জিতবে ইনশাআল্লাহ।  আমরা ভোলা জেলার সকল আর্জেন্টিনার সমর্থকরা আগামী ২১/১১/২২ ইং তারিখে দুপুর ২:৩০ মি৷. সময় ভোলাতে আর্জেন্টিনা ও বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে বিশাল শোডাউনের আয়োজন করেছি। ব্রাজিল সমর্থক জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসিব মাহমুদ হিমেল বলেন, বিশ্বকাপ মানেই একটা উৎসবমুখর পরিবেশ। আমরা আশা করছি এবার ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হবে। ব্রাজিল সার্পোটারদের নিয়ে একটা শো-ডাউন দেয়া হবে। বিগত বিশ্বকাপের তুলনায় এ বছর জার্সি কেনাবেচা অনেক বেশি বলে জানালেন ব্যবসায়ী মো. সোহাগ। তিনি বলেন, দোকানে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার জার্সি অনেক বেশি বিক্রি হচ্ছে। আশা করছি সামনে বিক্রি আরও বেশি হবে।

খেলাকে কেন্দ্র করে উন্মাদনার পাশাপাশি সম্প্রীতিও বজায় রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ইয়ারুল আলম লিটন। তিনি বলেন, দল বা দলের সমর্থন নিয়ে যতই যুক্তিতর্ক হোক না কেন, কোনো মতেই ঝগড়া-বিবাদে জড়ানো যাবে না। আমি খেলোয়াড়দের সেভাবেই নির্দেশনা দিয়েছি। এবার আমরা বড় পর্দায় খেলা দেখানোর ব্যবস্থাও রেখেছি। ভোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দর্শকরা খেলা উপভোগ করতে পারবেন । ইলিশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব মোঃ আনোয়ার হোসেন সোটন বলেন -খেলাধুলা মনের প্রশান্তি যোগায় এবং তরুণদের বিভিন্ন খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।আগামী ২০ই নভেম্বর থেকে ফুটবলের বিশ্ব আসর অনুষ্ঠিত হবে।উক্ত খেলায় ৩২টি দল অংশগ্রহণ করবে। পৃথিবীর প্রতিটি দেশই এই প্রত্যেকটা দলের সাপোর্টার রয়েছে। তেমনই আমাদের দেশেও রয়েছে।

ফুটবলকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়ানো যাবে না।দল যার যার পছন্দ থাকতেই পারে।খেলা দেখা এবং দলের সাপোর্ট করতে গিয়ে কারো সাথে কোনো ধরনের বাজে আচরণ করা যাবে না।মনে রাখতে হবে এই সমাজে আমরাই বসবাস করবো,রাতের পর দিন আসলেই একজন আরেকজনের সাথে দেখা হবে কথা ও হবে,তবে কেনো আমাদের মধ্যে অন্য কোনো রাষ্ট্রের জন্য মনমালিন্য বা জগড়া হবে?আর একটি কথা আপনার পছন্দের দলের সাপোর্ট করেন ভালো কথা কিন্তু সেই দলের পতাকা টানানো লাগবে কেনো?অনেক সময় দেখা যায় পতাকা টানাতে গিয়ে অনেক দূর্ঘটনার ও শিকার হয়,তাই আপনাদের কাছে বিশেষ অনুরোধ ফুটবলকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে না হয়।