রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নিভৃত গ্রাম বহরপুর ইউনিয়নের পাকালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মধুসূদন সরকার আবারও প্রমাণ করেছেন— প্রকৃত শিক্ষক শুধু বইয়ের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ নন, বরং জীবনমুখী শিক্ষার মাধ্যমেও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তোলা যায়।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে একটি ছবি, যেখানে দেখা যায় প্রধান শিক্ষক নিজ হাতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে বিদ্যালয়ের কাঁচা প্রবেশপথে ইট-বালু ফেলে চলাচলের উপযোগী করে তুলছেন। বর্ষায় পানি জমে কর্দমাক্ত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের চলাচলে চরম দুর্ভোগ হচ্ছিল। এমনকি কয়েকজন কাদায় পিছলে পড়েও গিয়েছিল। আর পা পিছলে পড়লে ঐ শিক্ষার্থীর সেই দিনের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। এতে শিক্ষার চরম ক্ষতিসাধন হয়।
বিষয়টি নিজের চোখে দেখার পর প্রধান শিক্ষক মধুসূদন সরকার আর বসে থাকেননি। সংশ্লিষ্টদের জানালেও তাৎক্ষণিক কোনো পদক্ষেপ না আসায়, তিনি নিজেই কোমর বাঁধেন সংস্কারে। পাশে পান কিছু শিক্ষার্থীকে। সমালোচনাও আসে। কেউ কেউ আবার একে ‘শিশুশ্রম’ বলে আখ্যা দেন। তবে সচেতন মহল বলছে, এটি বাস্তব শিক্ষা সহমর্মিতা, দায়িত্ববোধ ও জীবনের সমস্যার সামনে দাঁড়ানোর সাহস শেখার পাঠ।
পাকালিয়া সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মধুসূদন সরকার বলেন, "শুধু বইয়ের পড়া নয়, বাস্তব জীবনেও সমস্য মোকাবিলা করতে শেখানো শিক্ষারই অংশ। আমি চাইনি ছাত্রছাত্রীরা প্রতিদিন ভিজে-কাদায় পড়ে কষ্ট পাক। তাই পথ সংস্কারে নেমে পড়ি।"
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, "এটি শুধু একজন শিক্ষকের দায়িত্ববোধ নয়, বরং সমাজের সবাইকে অনুপ্রেরণা দেয়, নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ব নিলে সমস্যার সমাধান সম্ভব।"
বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, "আমি সরেজমিনে বিষয়টি পরিদর্শন করবো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।"
স্থানীয়দের মতে, দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় রাস্তাটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে উঠেছিল। শিক্ষক মধুসুদন সরকার নিজ উদ্যোগে সংস্কার শুরু করায় দুর্ভোগ কমবে এবং শিক্ষার্থীরাও হাতে-কলমে শিখবে কীভাবে দায়িত্ব নিতে হয়।
এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশংসার জোয়ার বইছে। অনেকে তাঁকে বলছেন ‘ তিনি একজন আদর্শ শিক্ষকও বটে।'