সম্প্রতি মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ শিক্ষার্থী সাফওয়ান কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক  আসিফ মাহাতাব উৎস ও ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেনকে শিরচ্ছেদ করে হত্যার হুমকি প্রদান করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এই হুমকি পোস্টে গ্রাফিক ছবি ও কটূক্তিসহ প্রকাশ্যে দুই শিক্ষকের প্রাণহানির জঘন্য বার্তা দেয়া হয়। এর পর ওই শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনায় কয়েক জন বাম রাজনীতিবিদ ও সংগঠন বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীর পক্ষে অবস্থান নেয়,  যার মাধ্যমে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি ও ট্রান্সজেন্ডারকে সমর্থন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন। 
 
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২৫০ জন শিক্ষক একত্রিত হয়ে যৌথ বিবৃতি জারি করে এই নৃশংস এবং অগ্রহণযোগ্য হুমকির তীব্র নিন্দা জানান। তারা বলেন, “মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শিক্ষার পরিবেশের ওপর এমন উগ্র হুমকি গণতন্ত্রের মূল ভিত্তিকে চ্যালেঞ্জ জানানো।”
 
হুমকিপ্রাপ্ত শিক্ষকরা নিজেই জানান, এই ঘটনায় তাঁদের জীবন নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ বেড়েছে। ড. সরোয়ার হোসেন বলেন, “এই হুমকি শুধু আমার ব্যক্তিগত নয়, এটি আমাদের সবার মতপ্রকাশের অধিকার ও মুক্ত চিন্তার ওপর আঘাত।” অন্যদিকে আসিফ মাহাতাব উৎস বলেন, "আমি আইনি ও সামাজিক মূল্যবোধের মধ্যে থেকে কাজ করেছি, কিন্তু তার জন্য আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।"
 
এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত শুরু করেছে। শিক্ষকদের নিরাপত্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সুরক্ষায় রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি তুলেছে শিক্ষক সমাজ।
 
অপরদিকে, জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা শায়েখ আহমাদুল্লাহ ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে মন্তব্য করেছেন, " বিকৃতিকে অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পশ্চিমা চক্রান্তের বিরোধিতা করায় মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিকৃত যৌনাচারের সমর্থক ছাত্রসহ চিহ্নিত কিছু লোক কর্তৃক দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে প্রাণনাশের হুমকি প্রদানের ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

এর চেয়েও দুঃখজনক হলো, এই হুমকিদাতাকে নিন্দা জানানোর পরিবর্তে কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন উল্টো তার পক্ষ সমর্থন করছে। এটি শিক্ষাঙ্গন ও সমাজ উভয়ের জন্যই একটি অশুভ দৃষ্টান্ত।

আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং শিক্ষকদ্বয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি হুমকিদাতাদের আইনের আওতায় আনার বিষয়ে সরকারের প্রতি জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।" এই বিষয়ে আরো অনেকেই বলছেন, প্রাণনাশের হুমকি এবং উগ্রবাদীতা কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
 
সাম্প্রতিক এই ঘটনা দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য এক গভীর সংকেত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মুক্ত চিন্তার অধিকার সুরক্ষার পাশাপাশি ধর্ম ও সমাজের সংবেদনশীলতাকে সম্মান করা অপরিহার্য। তবে এর মাঝে হুমকি, সহিংসতা এবং বিভাজন যেন কোনোভাবেই জায়গা না পায়, তা নিশ্চিত করা সময়ের দাবি।
 
শেষ পর্যন্ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জাতির বিবেক হিসেবে গণ্য হন। তাদের প্রতি এই ধরনের হুমকি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, বরং জাতির ভবিষ্যতের ওপর এক ভয়াবহ আঘাত। তাই দ্রুত দোষীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা এবং শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি বলে সচেতনমহল ও শিক্ষাবৃত্তরা মনে করেন।