রংপুর জেলায় প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষের বসবাস। পরিসংখ্যান বলছে, ৩০ লক্ষ মানুষের মধ্যে প্রায় ৫ লক্ষ নারী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শ্রম বিক্রি করে সংসারে আর্থিক জোগান দেন। দেশে মোট শ্রমশক্তির প্রায় অর্ধেকও নারী।

নারী শ্রমশক্তির মধ্যে ৭৫ শতাংশ কৃষি, বনায়ন ও মৎস্য খাতের সাথেও জড়িত। কৃষি ও এর উপখাতের মূল চালিকাশক্তিও নারী। এতো কিছুর পরেও মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন রংপুরের নারী কৃষি দিনমজুররা। সচেতন নারীরা বলছেন, নারী শ্রমিকদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করায় পদে পদে অবহেলিত হচ্ছে তারা। এই বৈষম্য দূর করতে হলে বিদ্যমান মজুরি আইন বদলাতে হবে। রংপুর মহানগরীর ৪নং ওয়ার্ডের বাসন্তী, মালতী, রাণীসহ বেশ কয়েকজন নারী শ্রমিক কাজ করছেন পুরাতন বেতার কেন্দ্রের সামনে একটি তামাক চারার মাঠে। তাদের সাথে কথা হলে তারা জানান, এসেছি সকাল ৮টায় আর কাজ শেষ হবে সন্ধ্যা নাগাদ।

দিনশেষে মজুরি আমরা পাবো জনপ্রতি ২৫০ টাকা। অথচ একজন পুরুষ মানুষ কাজ করলে তারা মজুরি পায় জনপ্রতি ৫০০ টাকা। কিন্তু কি করবো আমরা? পেটের দায়ে কাজে আসি, তর্ক করলে কেউ তো কাজেই নিবে না। নারী শ্রমিকদের প্রতি এমন অবহেলার চিত্র রংপুরের সর্বত্রই। ইউএন উইমেনের জরিপ অনুযায়ী, পর্যাপ্ত সুযোগ ও প্রযুক্তিগত বাধা দূর করতে পারলে নারী শ্রমিকদের কৃষিতে উৎপাদনশীলতা ২.৫ থেকে ৪ শতাংশ বৃদ্ধি করা যাবে। আর নারীদের সঠিক মূল্যায়ন করে কৃষিতে সরাসরি নিয়োজিত করা গেলে পরিবারের অপুষ্টি কমার গতি ১২ থেকে ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। নারী শ্রমিকদের নানা সমস্যার দিক নিয়ে কথা হলে উন্নয়ন কর্মী ও রংপুর সদর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা তাহমিনা শিরিন এ প্রতিবেদকে বলেন, নির্ধারিত সময়ের চেয়ে নারীরা কাজ বেশি করে কিন্তু মজুরি পায় কম। এসব নারী শ্রমিকরা নানাভাবে যৌন হয়রানিও শিকার হয়।

এভাবে পদে পদে লঙ্ঘিত হচ্ছে শ্রম আইন। শ্রম আদালত থাকার পরও নারী শ্রমিকরা নানাভাবে বঞ্চিত ও নির্যাতিত হলেও প্রতিরোধে এগিয়ে আসছে না কেউ। এসব বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে। রংপুরে অনেক নারী দিনমজুর আছে। সবার কথা শুনতে হবে সমস্যা সমাধান করতে হবে। তাহলে রংপুরসহ গোটা দেশের সার্বিক উন্নয়ন আরো বাড়বে। এদিকে বিবিএসের সবশেষ কৃষি শুমারির জরিপ বলছে, দেশের মোট ৯০-৯৫ শতাংশ পরিবার পল্লী এলাকায় বসবাস করে। যার মধ্যে ৫৩.৮২ শতাংশ কৃষি পরিবার। এসব পরিবারের নারীদের কৃষিতে সরাসরি যুক্ত করতে পারলে এগিয়ে যাবে দেশ।