মনপুরার একমাত্র মহিলা কলেজ মনোয়ারা বেগম মহিলা কলেজ: ২৪ বছরেও উন্নয়নবঞ্চিত
দ্বীপাঞ্চলের শত শত নারী শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত—জরাজীর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান, নেই পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও সরকারি সহায়তা
প্রতিবেদক: মো: হোসেন
উপজেলা প্রতিনিধি, মনপুরা, ভোলা |
ভোলার দ্বীপ উপজেলা মনপুরায় নারী উচ্চশিক্ষার একমাত্র প্রতিষ্ঠান মনোয়ারা বেগম মহিলা কলেজ। ২০০১ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন ভোলা-৪ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আলহাজ্ব নাজিম উদ্দিন আলম। কলেজটির নামকরণ করা হয় তাঁর প্রয়াত মা মনোয়ারা বেগমের স্মরণে।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, ২৪ বছর পেরিয়ে গেলেও কলেজটির উন্নয়নে নেই সরকারি সহযোগিতা বা দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি। বর্তমানে এখানে প্রায় দুই শতাধিক ছাত্রী লেখাপড়া করছে। অথচ পুরো কলেজের অবকাঠামো বলতে পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট একটি জরাজীর্ণ একতলা ভবন এবং চার কক্ষের একটি টিনশেড ঘর। পাকা ভবনটির দেয়াল থেকে নিয়মিতই খসে পড়ে প্লাস্টার, যা শিক্ষার্থীদের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ।
---
‘আমরা তো রাজনীতি বুঝি না, শুধু পড়াশোনা করতে চাই’
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ—মানসম্মত শিক্ষা পাওয়ার জন্য নেই পর্যাপ্ত ক্লাসরুম, নেই ল্যাব, এমনকি নেই শান্ত পরিবেশও। একজন ছাত্রী বলেন,
“আমরা তো রাজনীতি বুঝি না। শুধু চাই ভালোভাবে পড়াশোনা করতে। কিন্তু সুযোগ-সুবিধার অভাবে অনেক কষ্ট হয়।”
একজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“আমার মেয়ে এখানে পড়ে। কলেজের ভবন দেখে ভয় লাগে। ২৪ বছরেও কেউ কোনো উন্নয়ন করলো না। এটা কি শুধুই রাজনৈতিক কারণে?”
---
অধ্যক্ষ বলছেন: রাজনৈতিক কারণে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত
কলেজের অধ্যক্ষ জনাব মাহবুবুল আমল শাহীন বলেন,
“এই কলেজটি বিএনপি নেতার প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বরাবরই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে। অথচ এটি মনপুরার একমাত্র নারী কলেজ। বছরের পর বছর উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত থাকা নারী শিক্ষার প্রতি চরম অবহেলার উদাহরণ।”
তিনি আরও বলেন,
“শিক্ষা নিয়ে রাজনীতি চলতে পারে না। একটি জাতির অর্ধেক নারী—তাদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।”
---
বিশ্লেষকদের মত: নারী শিক্ষা নিয়ে রাজনীতি অমানবিক
শিক্ষা বিশ্লেষকগণ মনে করছেন, দ্বীপ অঞ্চলের মতো পশ্চাৎপদ এলাকাগুলোতে নারী শিক্ষার প্রসারে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
“মনোয়ারা বেগম মহিলা কলেজ কেবল একজন রাজনীতিবিদের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান নয়, এটি শত শত নারীর স্বপ্নের আশ্রয়স্থল। এর প্রতি উদাসীনতা মানেই নারী উন্নয়নের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া।” —মন্তব্য করেন এক স্থানীয় শিক্ষক।
---
প্রতিষ্ঠাতার প্রতিশ্রুতি: শিক্ষা হবে রাজনীতিমুক্ত, নারীদের অগ্রাধিকার
কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব নাজিম উদ্দিন আলম বলেন,
“মনপুরার জনগণ যদি আমাকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সমর্থন দেন, আমি এই কলেজসহ পুরো উপজেলায় শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন বিপ্লব ঘটাবো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হবে রাজনীতি মুক্ত, আর নারী শিক্ষায় থাকবে বিশেষ অগ্রাধিকার।”
সমাপনী কথা: দ্বীপাঞ্চলের মেয়েদের জন্য চাই নিরাপদ ও উন্নত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
মনোয়ারা বেগম মহিলা কলেজ এখন শুধু একটি অবহেলিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি প্রশ্নচিহ্ন—নারী শিক্ষার প্রতি রাষ্ট্র ও শাসকগোষ্ঠীর দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন।
যেখানে দেশের প্রতিটি প্রান্তে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার দাবি উঠছে, সেখানে মনপুরার মেয়েরা কেন থাকবে পিছিয়ে?
সময়ের দাবি—রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে, এই কলেজটিকে উন্নয়নের মূলধারায় ফিরিয়ে আনা হোক।