ভোলার মনপুরা উপজেলার জনতা ঘাট থেকে চরফ্যাশনের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন চলাচলকারী একমাত্র লঞ্চটি যাত্রীদের জন্য পরিণত হয়েছে জীবনের ঝুঁকিপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে। ছোট আকারের এই লঞ্চটি মেঘনার উত্তাল ঢেউয়ের মাঝে প্রায়ই ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করে, অথচ এতে নেই কোনো জীবন রক্ষাকারী উপকরণ বা জরুরি মুহূর্তে সহায়তার ব্যবস্থা। ফলে যাত্রীদের মধ্যে প্রতিনিয়ত বাড়ছে উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা।

শুধু লঞ্চের ঝুঁকিই নয়, ঘাটসংক্রান্ত দুরবস্থাও যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। জনতা ঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়ার জন্য যে খাল ব্যবহার করা হয়, তাতে অধিকাংশ সময় পানি না থাকায় লঞ্চটি নদীর মাঝখানে অবস্থান করে। এতে রোগী, শিশু, নারী ও বয়স্ক যাত্রীদের শুকনো খাল পেরিয়ে দীর্ঘ পথ হেঁটে, কখনো কাদামাটি পেরিয়ে, কখনো হাঁটু পানিতে হেঁটে লঞ্চে উঠতে হয়। অনেক সময় এই যাত্রা হয় অত্যন্ত বিপজ্জনক ও কষ্টকর।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই খালটি খননের দাবি জানানো হলেও এ পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। অথচ সামান্য উদ্যোগেই খালটি নিয়মিত খনন করে নৌযান চলাচলের উপযোগী রাখা সম্ভব। পাশাপাশি, জনতা ঘাট এলাকায় একটি স্থায়ী পল্টুন নির্মাণেরও জোর দাবি জানানো হচ্ছে, যাতে যাত্রীরা নির্বিঘ্নে ও নিরাপদভাবে লঞ্চে ওঠানামা করতে পারেন।

মনপুরার একজন ভুক্তভোগী যাত্রী বলেন, “জোয়ার না থাকলে লঞ্চ নদীর মাঝখানে থাকে। বৃদ্ধ মানুষ আর ছোট শিশুদের নিয়ে খাল পার হয়ে লঞ্চে ওঠা অত্যন্ত কষ্টকর। একবার একজন বৃদ্ধ পড়ে গিয়ে আহত হয়েছিলেন। কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারিনি।”

এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় জনগণ মনপুরা উপজেলা প্রশাসন এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনটি প্রধান দাবির বাস্তবায়ন চেয়েছেন:

১. মনপুরা-চরফ্যাশন রুটে নিরাপদ, লাইসেন্সপ্রাপ্ত ও আধুনিক লঞ্চ চলাচলের ব্যবস্থা।
২. জনতা ঘাটের খালটি নিয়মিত খনন করে নৌযান চলাচলের উপযোগী রাখা।
৩. যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি স্থায়ী পল্টুন নির্মাণ।

নৌপরিবহন খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হলে যাত্রীদের দুর্ভোগ অনেকাংশে কমবে এবং নৌপথে যাতায়াত ব্যবস্থা হবে নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও কার্যকর।