মাগুরা শহরের পিয়ারলেস মেডিকেল সার্ভিসেস এন্ড হাসপাতালের আলট্রাসনোগ্রাফিতে যমজ শিশুর অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও অপারেশন থিয়েটারের জন্ম নিল এক শিশু। এই ঘটনায় মাগুরা সদর থানায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শিশু চুরির অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীর ভাই। সন্তান ফিরে পেতে আহাজারি করছেন প্রসূতি আরজিনা বেগমসহ তার পরিবার।
প্রসূতি আরজিনা বেগমের তিনটি আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টে তার গর্ভে যমজ দুইটি শিশুর তথ্য আসে। তবে অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসক জানান, তার গর্ভে একটি পুত্র শিশু ছিল। এরপর শুরু হয় ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বাগবিতণ্ডা। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ এই ঘটনা গোপন রাখে। এদিকে প্রসূতি আরজিনার চিকিৎসা ব্যাহত হতে পারে এমন আশঙ্কায় ঘটনার দুদিন পর প্রতিবেদকের নজরে আনে ভুক্তভোগী পরিবার। তবে এ ঘটনায় অভিযোগের আলোকে প্রাথমিক তদন্ত করেছে মাগুরা সদর থানা পুলিশ।
ভুক্তভোগী আরজিনা বেগমের ভাই মো: ইমদাদুল জানান, আরজিনা বেগম গর্ভবতী হয়ে গত ১৮ই এপ্রিল মাগুরার লাঙ্গলবাদ বাজারে অবস্থিত শান্তনু ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান। সেখানে সনোলজিস্ট ডা. শারমিন আক্তার এনি আল্ট্রাসনোগ্রাফি করেন এবং রিপোর্টে যমজ দুই শিশুর তথ্য উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে ২ জুন সাহিদা প্রাইভেট হাসপাতাল সেন্টারে সনোলজিস্ট ডা.সোনিয়া আক্তার দ্বিতীয়বার আল্ট্রাসনোগ্রাফি করেন এবং রিপোর্টে যমজ দুই শিশুর অস্তিত্ব উল্লেখ করেন।
পরবর্তীতে প্রসূতি আরজিনার পরিবার যমজ দুই শিশুর গর্ভপাতের ঝুঁকি এড়াতে গত ২৭ জুন মাগুরা শহরের পিয়ারলেস হাসপাতালে অপারেশনের জন্য ভর্তি করেন। ভর্তিরত ক্লিনিকে অপারেশনের আগে সনোলোজিস্ট ডা. অরুন কুমার ঘোষ আল্ট্রাসনোগ্রাফি করেন এবং তার
রিপোর্টেও গর্ভে দুটি সন্তানের তথ্য আসে। রিপোর্টে যমজ দুই শিশুর ওজন উল্লেখ করা হয়েছে একটির ৩ কেজি ১৮গ্রাম এবং অপরটির ২ কেজি ৮১ গ্রাম। এই তিন রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে ২৮ জুন প্রসূতি আরজিনা বেগমের অপারেশন করেন ডা. তপন কুমার ও অজ্ঞান ডা. সৌমেন।
অপারেশনের পরে ক্লিনিকের লোকজন এসে জানান আরজিনা বেগম একটি পূত্র সন্তান জন্ম দিয়েছেন। আরো জানান প্রসূতির গর্ভে দ্বিতীয় কোন সন্তান নেই। এসময় আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টে যমজ দুই শিশুর তথ্য ভুল ছিল বলে দাবি করেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। এরই প্রেক্ষিতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের সাথে রোগীর স্বজনদের বাক-বিতণ্ডা শুরু হয়।এক পর্যায়ে এই ঘটনায় প্রসূতির ভাই মোঃ এমদাদুল মোল্লা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শিশু চুরির তদন্ত চেয়ে একটি অভিযোগ পত্র জমা দেন মাগুরা সদর থানায়।
প্রসূতির ভাই মো: এমদাদুল মোল্লা বলেন, তিনটি রিপোর্টে বোনের গর্ভে যমজ দুইটি শিশুর তথ্য রয়েছে। এটা ভুল হতে পারে না। অবশ্যই ক্লিনিকের লোকজন মিলে আমার বোনের একটি সন্তানকে সরিয়ে ফেলেছে। আমি এর সঠিক তদন্ত চাই।
পিয়ারলেস মেডিকেল সার্ভিসেস এন্ড হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী মোঃ ফরহাদ হোসেন বলেন, মাগুরা জেলায় ক্লিনিকের সংখ্যা বেশি হলেও এখানে বাচ্চা চুরির মত ঘটনা কোথাও ইতোপূর্বে ঘটেনি। যমজ দুটি শিশু রিপোর্টে থাকায় অপারেশন থিয়েটারে সেইভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। সিজার করে পাওয়া যায় একটা ছেলে সন্তান।আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট ভুল ছিল। আর এর বাইরে যদি কোন ঘটনা ঘটে থাকে তবে সে দায়ভার ক্লিনিকের নয় ডাক্তাদের।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সোনোলজিস্ট ডা. অরুন কুমার ঘোষ বলেন, আরজিনা বেগম স্বাস্থ্যবান হওয়ায় তার গর্ভের শিশুর ছবি পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল না। এই ক্ষেত্রে আমি কিছুটা সন্দিহান হয়ে পড়ি। ফলে পূর্বের দুইটা রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে যমজ দুই শিশু আছে উল্লেখ করে রিপোর্টটি তৈরি করি। অনেক সময় আমাদের দেখা এবং অনুমানে ভুল হতে পারে।
ডা. তপন কুমার বলেন, আল্ট্রাসনোগ্রাফির তিনটি রিপোর্টে যমজ দুটি শিশুর তথ্য উল্লেখ রয়েছে। সেই হিসেবে প্রস্তুতি নিয়ে অপারেশন করি। জরায়ু ওপেন করে একটি ছেলে সন্তান দেখতে পায়। দ্বিতীয় সন্তান ছিল না। তাৎক্ষণিক আমি প্রসূতির স্বামী মোঃ রাশিদুলকে অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করিয়ে বিষয়টি অবহিত করি।
এ বিষয়ে জানতে মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. আইয়ুব আলী বলেন, ভুক্তভোগীর ভাইয়ের করা লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা সরেজমিন তদন্তে ডাক্তার এবং ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। এছাড়াও ক্লিনিকের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করেছি। আমাদের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তদন্ত শেষে বোঝা যাবে এঘটনার আসল রহস্য কি?